ডেস্ক নিউজ
স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে গত ২৫ জুন। যার সুফল পেতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষ। এবার ঢাকাবাসীকে যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে আসছে ডিসেম্বরেই চালু হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এটি বর্তমান সরকারের আরেকটি মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ডিসেম্বরেই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বিজয় দিবসের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলের সুবিধা উন্মুক্ত করতে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর মতো এটিও বর্তমান সরকারের একটি অনন্য অর্জন ও উন্নয়ন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে (দিয়াবাড়ী) উত্তরা-আগারগাঁও অংশের প্রায় ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর এই পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ। উত্তরা-আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে উত্তরা-আগারগাঁওর পথে। এরই মধ্যে জাপান থেকে ১৫ সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে। আরও নয় সেট ট্রেন আসার পথে। ট্রেন পরিচালনার জন্য নিয়ন্ত্রক ও চালকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একজন নারী চালক ও একজন নারীকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কমলাপুরে চারটি স্টেশনে নির্মাণ করা হচ্ছে স্টেশন প্লাজা। এসব স্টেশন প্লাজা হবে সুপরিসর। যাত্রীরা প্রাইভেট কার পার্র্র্কিংয়ের সুবিধা পাবেন এসব প্লাজায়। এ ছাড়া থাকবে অন্যান্য সুবিধাও। দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনগুলোর স্টিল ইস্পাতের ছাউনির কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসছে ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চালুর জন্য সব রকম প্রস্তুতি চলছে। সব প্যাকেজের কাজের অগ্রগতি বেশ সন্তোষজনক। আশা করা যায়, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। ডিএমটিসিএলের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের কাজ চলছে অবিরাম। কর্মী, শ্রমিক, টেকনিশিয়ানরা পালা করে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পে গড় অগ্রগতি ছিল ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশের বাস্তবায়ন ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্যাকেজ ভিত্তিক অগ্রগতি হচ্ছে-প্যাকেজ-১-এর (ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন) শতভাগ কাজ শেষ। এ ছাড়া প্যাকেজ-২-এর (ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ) কাজও শতভাগ শেষ। প্যাকেজ-৩ ও ৪-এর (উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ) সমন্বিত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্যাকেজ-৫-এর (আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ) সার্বিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্যাকেজ-৬ (কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশনের নির্মাণকাজ) এটির বাস্তব সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্যাকেজ-৭-এর (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম) প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্যাকেজ-৮-এর (রেল কোচ ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ) সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর আওতায় ১৬ ও ১৭তম ট্রেন সেট জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে ২২ জুলাই যাত্রা শুরু করে। চলতি মাসের শেষে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা। প্যাকেজ-৯-এর (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) আওতায় এই সিস্টেম সংগ্রহের জন্য দরপত্র দাখিল ও মতামতের জন্য ২৭ জুলাই জাইকার কাছে পাঠানো হয়েছে। দেশের প্রথম মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। যদিও করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের কিছু সময়ে প্রকল্পের কাজে অনেকটা ধীরগতি নেমে আসে। পরবর্তীতে ওই বাধা কাটিয়ে উঠে আবারো দ্রুত গতিতে চলতে থাকে প্রকল্পের কাজ। প্রথমদিকে মেট্রোরেল লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ডিপিপি সংশোধন করে তা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। নতুন অংশ (মতিঝিল-কমলাপুর) যোগ হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। যা মতিঝিল পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির প্রথম অংশ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং তৃতীয় অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৯টি প্যাকেজের কাজ চলমান। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
এদিকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রোরেলের ইন্টিগ্রেশন টেস্ট শুরু হবে। পুরো প্রকল্পের এই টেস্ট সম্পন্ন হতে অন্তত তিন মাস সময় লাগতে পারে। ট্রেন অপারেটর, চালক, নিয়ন্ত্রকসহ নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে আগামী অক্টোবরের প্রথম দিকে। তবে মেট্রোরেলের ভাড়া এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি ভাড়া নিয়ে কাজ করছে। খুব তাড়াতাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন ছিদ্দিক। এ ছাড়া র্যাপিড পাস বা স্থায়ী কার্ড এবং তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার পুরো ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। সরকার ভাড়া ঠিক করে দিলে সফটওয়্যারে ভাড়ার হার বসিয়ে র্যাপিড পাস বিক্রি শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এ বছর ডিসেম্বর থেকে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্যে বিরামহীন কাজ করছে সরকার। যা হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের আরেক মাইলফলক।