ডেস্ক নিউজ
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে আতঙ্কে আছে মানুষ। উচ্চপর্যায়ের ছোঁয়াচে এ ভাইরাসে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এই মুহূর্তে স্থবিরতা। ক্রিকেটাররাও এখন অখন্ড অবসরে সময় কাটাচ্ছেন। তবে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় গত বছর ২৯ অক্টোবর থেকেই ১ বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত আছেন সাকিব আল হাসান। তাই তার অনুশীলনের তাড়া নেই। শনিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। আর সেখানে গিয়েই পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করে নিয়েছেন। অন্তত ১৪ দিন এই স্বেচ্ছা আইসোলেশন শেষেই স্ত্রী, সন্তানসহ বাকিদের সঙ্গে দেখা করবেন। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থেকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক ভিডিও বার্তায় সতর্কবাণী দিয়েছেন সাকিব। বিশেষ করে বিদেশ ফেরতদের অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা জরুরী বলে জানিয়েছেন তিনি। যেমনটা নিজে থেকেই এখন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে করছেন সাকিব। তিনি মনে করেন কিছু সহজ পদ্ধতি ও সাবধানতা অবলম্বন করলেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। গত বছর নবেম্বরে চীনে প্রথম করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করে। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে মূলত মানুষের মাধ্যমেই। যারা চীন ভ্রমণ করেছেন কিংবা চীন থেকে বিভিন্ন দেশে গেছেন তারাই এই ভাইরাসের বাহক হয়েছেন। এভাবেই কোভিড-১৯ ছড়াতে ছড়াতে এখন বিশ্বের প্রায় ১৮৪ দেশে ছড়িয়ে গেছে। আর সে কারণেই ভ্রমণ বিষয়ক নানা নীতিমালা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের নানা স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়টি জানা আছে সাকিব আল হাসানের। তাই যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছেই তিনি স্বেচ্ছায় গৃহ বন্দিত্ব বেছে নিয়েছেন। যদি বিমান ভ্রমণে কোনভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই থাকেন সেক্ষেত্রে নিজ পরিবার কিংবা অন্য মানুষের সংস্পর্শে এসে তা ছড়িয়ে দিতে চান না তিনি। তাই এক ভিডিও বার্তায় নিজের সতর্কতামূলক অবস্থান জানিয়ে অন্যদেরও সাবধান করেছেন। ভিডিও বার্তায় সাকিব বলেন, ‘আমি এইমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছালাম। যদিও বিমানে সবসময় ভয় কাজ করেছে। তবুও চেষ্টা করেছি, নিজেকে কিভাবে জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। যখন এখানে পৌঁছালাম, আমি সোজা একটি হোটেলের রুমে উঠেছি। আমি ওদের অবগত করেছি, এখানে থাকব কিছুদিন। আমি যেহেতু বিমানে করে এসেছি, আমার একটু হলেও ঝুঁকি আছে। তাই আমি নিজেকে আইসোলেটেড করে রেখেছি। যে কারণে আমি আমার বাচ্চার সঙ্গে দেখা করিনি। এটা অবশ্যই আমার জন্য কষ্টের।’ এই কষ্টটা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা সব মানুষের জন্যই। দেশে ফিরে আসার পর সবাই আকুল থাকেন নিজ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী চীন, ইতালি, ইংল্যান্ড ও সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন। কিন্তু তারা অধিকাংশই কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি। যার ফলশ্রæতিতে ইতোমধ্যে রবিবার পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২ ব্যক্তি মৃত্যুবরণও করেছেন। আর সব আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ঘটনা এক। বিদেশ ফেরতদের কাছ থেকেই করোনা ছড়িয়েছে। তাই কোয়ারেন্টাইনে থাকা কতটা জরুরী সে বিষয়েও বলেছেন সাকিব, ‘কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চললে আমরা এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব। আমাদের দেশকেও মুক্ত রাখতে পারব। যেমন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় সঠিক শিষ্টাচার মেনে চলা। বিদেশ ফেরত যদি কেউ থাকে, তবে তার নিজেকে ঘরে রাখা এবং যেন ঘরের বাইরে না যান, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, আত্মীয় স্বজন বা বাইরের মানুষ আপনার সঙ্গে এসে যেন দেখা করতে না পারেন। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে যা খুবই জরুরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারী বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন, আমাদের দেশে কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতাই পারে দেশকে আর আমাদের সুস্থ রাখতে।’
দীর্ঘ সময় পর দেশে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য যে আবেগ কাজ করে তা পরিহার করাটা খুব জরুরী। সাকিব এমনটাই জানালেন। কোন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকলে তা ১৪ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে। এই সময়টা একাকী কাটিয়ে দিলে আর ভয় থাকে না। এ জন্যই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন জরুরী। সাকিব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমার এ সামান্য আত্মত্যাগ করতে পারলে অনেক দূর এগুতে পারব। সুতরাং, এ কারণেই আমাদের দেশে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের সবারই ছুটি অনেক কম থাকে। তারা চায় আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, ঘোরাফেরা করতে, আড্ডা দিতে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে একত্রিত হতে। যেহেতু আমাদের সময়টা অনুক‚লে নয়, আমি সবাইকে অনুরোধ করব এ নিয়মগুলো যেন সবাই মেনে চলেন। কারণ, এ সামান্য আত্মত্যাগটুকু পারে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, সুস্থ রাখতে এবং আমাদের নিজেদেরও সুস্থ রাখতে। আশা করি, সবাই আমার এ কথাগুলো শুনবেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যেসব দিক নির্দেশনা দিয়েছে, এগুলো সম্পর্কেও অবগত হবেন এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর একটা কথা অবশ্যই বলতে চাই, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। আমার মনে হয় না এটা কোন ভাল ফল বয়ে আনতে পারবে। আমি খবরে দেখেছি, অনেকে ৩, ৪, ৫ বা ৬ মাস পর্যন্তও খাবার সংগ্রহ করছেন। আমার ধারণা, খাবারের সঙ্কট কখনই হবে না, ইনশাআল্লাহ। আমরা কেউ না খেয়ে মারা যাব না। তাই আমরা আতঙ্কিত না হই। আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তই পারে এ থেকে রক্ষা করতে। সেটা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব। আশা করি, সবাই ভাল থাকবেন এবং প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভ্রমণ বা বাড়ির বাইরে বের হবেন না।’