কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে এক লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাঠাতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নীতিমালা শিথিল করে গতকাল ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যবসা প্রসারে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে ব্যবসায়ীরা এক বছরে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতেন তার এক শতাংশ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা শুধু প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ফি বাবদ বিদেশে পাঠাতে পারতেন। অন্য ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে এ সুবিধা ছিল না। এতে ব্যবসায়ীরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ফি ছাড়া অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে সমস্যায় পড়ে যেতেন। এ সমস্যা সমাধানে গত নভেম্বর মাসে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নীতিমালা শিথিল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ব্যবসায়ীদের আয়কর বিবরণীতে ঘোষিত আগের বছরের পণ্য বিক্রির এক শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ফি ছাড়াও তাদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা বর্তমানে অডিট ফি, সার্টিফিকেশন ফি, কমিশনিং ফি, টেস্টিং ফি, মূল্যায়ন ফিসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে অর্থ বিদেশে পাঠাতে পারছেন। একই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কার্যরত যে সব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় মুদ্রায় স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রয় করে সেসব প্রতিষ্ঠানকেও তাদের বিক্রয়ের এক শতাংশ অর্থ বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম দফায় এ সংক্রান্ত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নীতিমালা শিথিল করলেও অনেকেই যাদের পণ্য বিক্রি স্থানীয় মুদ্রায় বা বৈদেশিক মুদ্রায় কম হচ্ছে তারা ব্যবসা প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না। যেমন, কোনো ব্যবসায়ী এক বছরে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ব্যবসায়ী এক শতাংশ হিসেবে ৫০ হাজার ডলার বিদেশে পাঠাতে পারবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজন ৯০ হাজার ডলার। কিন্তু নীতিমালার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের এ অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে গতকাল নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচলিত নীতিমালা আরেক দফা শিথিল করে এক লাখ ডলারের নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা এখন থেকে এক লাখ মার্কিন ডলার কিংবা আয়কর বিবরণীতে ঘোষিত বিগত বছরের পণ্য বিক্রির এক শতাংশ- এ দু’টির মধ্যে যেটি বেশি তা প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে বিদেশে পাঠাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর পর্ষদ সদস্য ফজলে শামীম এহসান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছর সব প্রতিষ্ঠানের পণ্য রফতানি কম হয়েছে। অনেকেই আগের বছরের যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করেছিলগত বছরে তা এক চতুর্থাংশও করতে পারেনি। কিন্তু ব্যবসা প্রসারের জন্য এ বছর বেশি পরিমাণ পরামর্শ ফিসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য বিদেশে অর্থ পাঠানোর প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের সার্কুলারের কারণে ব্যবসায়ীদের বিদেশে ব্যবসা প্রসারে অসুবিধা হচ্ছে। অপর দিকে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান বিদেশে রফতানি আয় বাড়াতে চাচ্ছে। এর জন্য পরামর্শ ফিসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে নতুন ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করায় রফতানি আয় বাড়াতে বড় ধরনের সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। নীতিমালা শিথিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এর ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিক প্রয়োজনে বেশি পরিমাণ অর্থ বিদেশে প্রেরণের প্রয়োজন হলে তারা সহজেই তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে পাঠাতে পারবেন। এতে রফতানি আয় বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, সময়ের প্রয়োজনে বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী করা হচ্ছে। নতুন সার্কুলারের আওতায় অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক তাদের গ্রাহকেরপক্ষে বর্ধিত সীমার আওতায় বৈদেশিক লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারবে। এতে রফতানি আয় বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।