ডেস্ক নিউজ
নওগাঁর মান্দায় ‘ফাতেমা’ জাতের ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর প্রতিটি শীষে পাওয়া গেছে প্রায় ১ হাজার ধান। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের ফলন প্রায় তিনগুণ। উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের দোশতীনা গ্রামের শৌখিন কৃষক অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম বশিরের ওই ধান দেখতে এবং কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এত অধিক ফলনশীল জাতের ধান দেশের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ‘ফাতেমা’ জাতের এ ধান নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বশির জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসূমে এর ফলন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফিট। যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর একেকটি ধানের শীষে ৭৫০-১০০০টি করে ধান হয়। যা সাধারণ ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধান পেয়েছেন। এ ধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এ ছাড়া চাল খুব চিকন। ভাতও সুস্বাদু। তিনি আরও জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধান গাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ২০১৬ সালে প্রথম ওই ধান চাষ করেন। ওই বছর বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ তিনি দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এ ধান চাষ শুরু করেন। তিনি তার মায়ের নামানুসারে নাম না জানা এ ধানের নাম রাখেন ‘ফাতেমা ধান’। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষক লিটন, রঞ্জু, মামুন, আতাব আলী জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তারা কৃষক বশিরের এ ধান দেখতে এসেছেন এবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তারা এ ধান চাষ করবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ছামসুল ওয়াদুদ বলেন, ওই ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। এ ধান খড়া ও লবণ সহ্যকারী এবং সারা দেশে চাষের উপযোগী। সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে। এ ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন ৫ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।