ডেস্ক নিউজ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মো. মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান ওরফে রাশেদ খাঁ, সরোয়ার হোসেন মিয়া, তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল, শেখ মোহাম্মদ এনামুল হক, মোসাহেব হাসান ওরফে রাশু, আমিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, ২১ বছর আগের এ মামলার আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) সদস্য। এর মধ্যে পাঁচজন আজিজুল, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল ও মোসাহেব পলাতক। রায় ঘোষণার আগে নয় আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা শেষে তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। রায়ে ১৪ জঙ্গির প্রত্যেককে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ বা গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এ মামলায় হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ছিলেন মূল আসামি। কিন্তু অন্য মামলায় তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তিনি বাদ পড়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান, হেদায়েত উল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে গণতান্ত্রিক, বৈধ সরকার উৎখাত করার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার সভামঞ্চে বোমা পুঁতে রাখা হয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের পর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশ ধ্বংস করে দেয়। সে ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এজন্য যাতে হুজি, জেএমবি ও ইসলামী জঙ্গিরা এ ধরনের ঘটনা পুরনাবৃত্তি করতে না পারে তাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ প্রাঙ্গণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী একটি বোমা পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল মাটি খুঁড়ে ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৪০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র-রাষ্ট্রদ্রোহ ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ। হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচারিক আদালত রায় দেয়। রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড এবং ১৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়। হত্যাচেষ্টা মামলায় আপিলে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে হাই কোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর দন্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া ১৪ বছর দন্ডিত অন্য এক আসামি খালাস পান। অন্যদিকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।