ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনোই এতটা জরুরি হয়ে ওঠেনি। এতটা অপরিহার্য হয়ে ওঠেনি এর সমাধান। বিশ্ব কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ফাঁকা বুলি নয়, জলবায়ু উন্নয়নে বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনা চাই! গত সোমবার শীর্ষ স্থানীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এ আহ্বান জানান।
ওই কলামে তিনি বলেন, বহু দেশ রয়েছে যারা আমার দেশের মতো একই স্তরের দেশগুলোকে নিরাপদ রাখার জন্য তাদের কার্বন নির্গমন হ্রাসকরণ কর্মসূচি গতিশীল করছে না। বাংলাদেশের উত্তরে প্রতি বছর হিমালয়ের বরফ ক্ষেত্রগুলোতে জমা হওয়া টাটকা পানির ওপর নির্ভর করে এতদাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ। উষ্ণ জলবায়ু এখন সেই উৎসকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। উপকূলীয় বন্যার হুমকিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। ফসলের ফলন কমে যাওয়া জলবায়ুগত আরেকটি ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন, যা আমাদের শঙ্কিত করে তুলছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের খুবই সামান্য অংশের জন্য বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণকে দায়ী করা যেতে পারে। তবুও আমরা একটি সমাধানের পথে এগিয়ে চলায় নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এটি কেবল এই কারণে নয় যে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি এড়াতে চাই। এটি অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কার্বনশূন্য উন্নয়ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সর্বোত্তম উপায় এবং এ পথেই আমাদের জাতির জন্য আরো সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। এই বছরের শুরুতে আমার সরকার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছে। কিন্তু এটি অপেক্ষাকৃত ছোট পদক্ষেপ ছিল। পরবর্তীকালে কপ২৬ সম্মেলন সামনে রেখে আমরা বিশ্বের প্রথম জাতীয় ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছি। এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যার অধীনে আমরা স্থিতিস্থাপকতা বাড়াব, অর্থনীতি সমৃদ্ধ করব, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব এবং আমাদের নাগরিকদের জন্য সুযোগ আরো প্রসারিত করব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এ পরিকল্পনার অধীনে আমরা দশকের শেষ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে আমাদের ৩০ শতাংশ শক্তি অর্জন করব। আমরা বিশ্বাস করি উপকূল বরাবর বায়ু বিদ্যুতের জন্য উইন্ডমিল স্থাপন করা হলে তা ম্যানগ্রোভ বনকে পুনরুজ্জীবিত করবে, যা ঝড় এবং বন্যার হাত থেকে রক্ষার মাধ্যমে আমাদের নাজুক উপকূলকে স্থিতিশীল রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনা একযোগে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধ করবে। অন্যথায় এ ক্ষতি শুধু জলবায়ু পরিবর্তন থেকেই যে হতো তা নয়, বরং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক জীবাশ্ম জ¦ালানি অবকাঠামো থেকেও হতো। আমরা মনে করি, আমাদের জিডিপিতে সাড়ে ৮শ বিলিয়ন ডলারের সুবিধা পাওয়া যাবে। আমি বিশ্বাস করি, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ আগামী মাস ও বছরগুলোতে এই ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেবে, যার নেতৃত্বে থাকবে ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে স্বাধীনভাবেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নে এসব কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। কিন্তু যদি আমরা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে চাই, যাতে প্রাক-শিল্প যুগের থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেড কম উষ্ণতা ধরে রাখার কথা বলা হয়েছে, তাহলে আমাদের প্রয়োজন হবে জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার একটি বৈশ্বিক সংস্করণ। সে রকম একটি পরিকল্পনা অর্জনের ক্ষেত্রে গø্যাসগোতে এ বছরের কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনটি হতে পারে আমাদের শ্রেষ্ঠ সুযোগ।