নিউজ ডেস্কঃ
এ বছর দেশে ধান,গম ও ভুট্টা মিলিয়ে ৪ কোটি ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, ধানের পাশাপাশি ভুট্টার উৎপাদনও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ফিলিপিন্সে এক লাখ টন চাল রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
খামারবাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ধান,গম ও ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। আগামী বোরো মৌসুমেই সরকার কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি জানান, কৃষকের কাছ থেকে সরকার চার লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই অনেক প্রভাবশালী তৎপর হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে কোন কোন কৃষকের কাছ থেকে কি পরিমাণ ধান এবং কত দামে ধান কেনা হচ্ছে তার তালিকা পাঠাতে। পরে এটি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের পর সরকার এখন মানুষের পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্যে সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং কৃষিকে টেকসই করতে কৃষিভিত্তিক আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
কৃষকমুখী নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণেই বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অন্যান্য সেক্টরের পাশাপাশি কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। সারাবিশ্বেও বাংলাদেশের এই উন্নয়ন প্রশংসিত হচ্ছে। এ বছর ভুট্টার উৎপাদন ৬ গুণ বেড়ে ৪৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশে আলুর চাহিদা ৬০ লাখ টন হলেও এবার উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে স্বয়সম্পূর্ণ হলেও বাজারজাত প্রক্রিয়ায় যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ফলে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, আধুনিকীকরণ এবং যান্ত্রিকীকরণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
খাদ্যের মান নিশ্চিত না করে সেটি রফতানি করা হলে বিদেশীদের কাছ থেকে এর মানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে। কৃষিপণ্য রফতানি করার আগে মান যাচাইয়ে দেশে আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব নেই। বিষয়টি চিন্তা করেই সরকার পূর্বাচলে কৃষিপণ্যের মান নিশ্চিতের জন্য একটি আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠালে তিনি পূর্বাচলে দুই একর জমি বরাদ্দ করেছেন। দুধের মান নিয়েই দেশে হঠাৎ করেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুধের মান নিশ্চিত করতে সাভারে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
এ সময় তিনি জানান, স্বর্ণা, বিআর ২৯ সহ মোটা চালের দাম এখন অনেক কম। কিন্তু মিলাররা যে চাল চিকন করে মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করছে সেটার দাম এখনও বেশি। কারণ তারা এটির প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করছে। এর বাইরে দেশের কোন কোন অঞ্চলে মিনিকেট নামের ধানেরও চাষ হচ্ছে। যদিও তা স্বল্প মাত্রায় উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই মিনিকেট ধানের চালের দামও বেশি। সরকার কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য বিদেশে চাল রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সে এক লাখ টন চাল রফতানির এলসি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।