ডেস্ক নিউজ
ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে গত ০৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্য দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। সেই পানি যাবে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে। মানবিক এই চুক্তি যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সুনাম দিচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা তখন দেখলাম বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পানি বন্টন চুক্তিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে বিশৃঙ্খলার চেষ্টায় লিপ্ত একটি শ্রেণীকে। যেমনটি আমরা দেখেছি পূর্বে- পদ্মা সেতু কিংবা মেট্রো রেলের মতো প্রকল্প সমূহ পরিকল্পনার সময়।
ফেনী নদীটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। বাংলাদেশের সরকারি তথ্য মতে ফেনী নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়িতে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার। উৎপত্তির পর বাংলাদেশ ভারত সীমান্তরেখা বরাবর ভাটিতে এ নদী বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনে এ নদী সম্পর্কে যে তথ্য রয়েছে তাতে এর দৈর্ঘ্য ১৪০ কিলোমিটার এবং দু’দেশের সীমান্তরেখায় এ নদী ৯৪ কিলোমিটার পর্যন্ত আর বাংলাদেশ অংশে ঢোকার পর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। যেহেতু, নদীটি দুই দেশের সীমান্তে অবস্হিত, কাজেই ভারতকে এই ১.৮২ কিউসেক পানি তাদের প্রাপ্য পানি থেকেই সমন্বয় করা হবে। এটি শুধু মানবিক কারণে শহরে খাবার পানি সরবরাহের জন্য করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে যে পানিবণ্টন চুক্তি এটা আসলে এই চুক্তি নয়।
বাংলাদেশের কি ক্ষতি হলোঃ প্রথমত এটি যেহেতু, এটি একটি মানবিক চুক্তি, কাজেই এখানে বাংলাদেশের পাবার বিষয়টি আলোচনাও লজ্জাজনক। কিন্তু বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে প্রচারের ফলে অনেকেই মনে করছেন, এতে দেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেলো- তাদের জন্যেই এই আলোচনা। যে পানি ত্রিপুরায় সরবরাহ করা হবে তা ব্যবহার করা হবে খাবার পানির জন্যে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী ত্রিপুরাতে আশ্রয় নেয়। তখন এই শরণার্থীদের জন্যে খাবার, আশ্রয় দিয়েছিলো ত্রিপুরা। এছাড়া শুকনা মৌসুমে ফেনী নদীর পানির গড় পরিমান ১ হাজার ৮৭৮ কিউসেক। সে হিসেবে ত্রিপুরায় ১.৮২ কিউসেক পানি সরবরাহ করলে তা হবে বাৎসরিক গড় পানি প্রবাহের মাত্র ০.৯৬%, যা বাংলাদেশের জন্যে কোন ক্ষতির কারণ হবেনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
যে কারণে ইতিবাচকঃ বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তে সর্বমোট ৫৪ টি নদ-নদী রয়েছে, যার মধ্যে একমাত্র ফেনী নদীরই নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের কাছে। বাকি ৫৩ টি নদীরই পানি প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ ভারতের কাছে। কাজেই এই একটি মাত্র নদীর সামান্য পানি একটি মানবিক কারণে সরবরাহ করাটা বরং উচিতই বটে। এটি না করলে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য সহযোগিতা করা রাজ্যটির প্রতি বাংলাদেশের মানবিক ঋণ শোধ করা হতোনা।
কি পেলো বাংলাদেশঃ এই চুক্তির ফলে ত্রিপুরার রাজ্য সরকারের সাথে বন্ধুক্তপূর্ণ সম্পর্ক হলো বাংলাদেশের। এই একটি বিনিময়ের ফলে ইতোমধ্যেই ভারত ছয়টি নদীর (মনু, মহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার) পানি বাংলাদেশের সাথে বন্টনের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছে। ওই ছয়টি নদীর চারটিই ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়া এর পাশাপাশি তিস্তার পানি বন্টনের ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা রাজ্যের সমর্থন পাবে বাংলাদেশ।