বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত মামলার রায়ের পুনঃমূল্যায়ন করছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল। এ নিয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সফরত মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান। এ সময় স্টিফেন আশ্বাস দেন,রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিন দিনের সফরে ঢাকায় আছেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান। দ্বিতীয় দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
স্টিফেন ই বিগান বলেন, এটি একটি আইনি বিষয়। এটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতায় নয়। আমাদের সংশ্লিষ্ট আইনি সংস্থাগুলো বিষয়টি দেখছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক।
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে উপলদ্ধি করতে পেরেছি পঁচাত্তরের নৃশংসতা। বিষয়টির সাথে এদেশের মানুষের অনুভূতি জড়িয়ে আছে সেটি আমি লক্ষ্য করেছি।
এ সময় রাজনীতি ও অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় গোটা বিশ্বেই বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী জানিয়ে বিগান বলেন, এই অঞ্চলে তাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে থাকবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা।
স্টিফেন বিগান বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি রোড ম্যাপ নির্ধারণ করা হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে। আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করব।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, সমস্যার শুরু থেকেই মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরিতে সোচ্চার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিগান বলেন, এ সমস্যা টেকসই সমাধান নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বঞ্চিত এ জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। সব দেশকেই এ সমস্যা সমাধানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্যই এটা একা বাংলাদেশের সমস্যা নয়। যে উদারতা বাংলাদেশ দেখিয়েছে, তা অনন্য। সমস্যাটি সারা বিশ্বের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তাই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিটি প্রধান দেশের অভিন্ন সুরে উচ্চকণ্ঠ হয়ে সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা উচিত।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে বাংলাদেশের নতুন কনস্যুলেট কার্যালয় স্থাপনের বিষয়েও সম্মত হয় ঢাকা-ওয়াশিংটন।