ডেস্ক নিউজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বহু প্রতীক্ষার ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিলনমেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সময়ের শত গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত শতবর্ষের মিলনমেলা অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। মোট ১৬ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় সম্মাননা।
সম্মাননার নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় শুরু হয় মিলনমেলার উদ্বোধনী পর্ব। এরপর শুরু হয় ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ডাকসুর সাবেক জিএস বেগম মতিয়া চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হামিদা আখতার বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
পরে রবীন্দ্র, নজরুল, হারানো দিনের গান, আধুনিক গান, ষাট ও সত্তর দশকের বাংলা সিনেমার গান, রায়বেঁশে নৃত্য এবং সব শেষে সাবিনা ইয়াসমিনের একক পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি প্রবীণ শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম, বিশেষ অতিথি অ্যালামনাইয়ের সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সম্মাননা পেয়েছেন যাঁরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা পর্বের ব্যক্তিত্ব ক্যাটাগরিতে স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নবাব খাজা সলিমুল্লাহ এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও মো. জিল্লুর রহমান। উপাচার্য ক্যাটাগরিতে এ এফ রহমান, রমেশচন্দ্র মজুমদার, আবু সাঈদ চৌধুরী, মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ক্যাটাগরিতে খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন আহমেদ ও মুহাম্মদ সিদ্দিক খান। ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আ ন ম গাজীউল হক, আবদুল মতিন ও কাজী গোলাম মাহবুব। আন্দোলনে শহীদ ক্যাটাগরিতে আবুল বরকত, আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও ড. শামসুজ্জোহা। শহীদ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাটাগরিতে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আনোয়ার পাশা, আবুল খায়ের, মো. আব্দুল মুক্তাদির, আতাউর রহমান খান খাদিম, আ ন ম ফয়জুল মহী, আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ সাদত আলী, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, গোবিন্দচন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, সিরাজুল হক খান, এস এম এ রাশীদুল হাসান, শরাফত আলী, ফজলুর রহমান খান, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, মোহাম্মদ সাদেক ও মধুসূদন দে। শিক্ষাবিদ ক্যাটাগরিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আনি মহামেদ হবিবুল্লাহ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, নীলিমা ইব্রাহিম, আহমদ শরীফ, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবুল কাশেম, সরদার ফজলুল করিম, এ কে নাজমুল করিম, এ এফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, খান সারওয়ার মুরশিদ, মমতাজুর রহমান তরফদার, আজিজুর রহমান মল্লিক, মুহম্মদ আবদুল হাই, মো. রফিকুল ইসলাম, আবুল হুসেন, আনিসুজ্জামান ও আবদুল করিম। নারী ক্যাটাগরিতে লীলা নাগ, ফজিলাতুন্নেছা ও করুণাকণা গুপ্তা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে মোকাররম হোসেন খন্দকার, আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, এ এম হারুন-অর-রশীদ, দ্বিজেন শর্মা। সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত আলী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক, বুদ্ধদেব বসু, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে জহির রায়হান, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীন, ওয়াহিদুল হক ও মোবারক হোসেন খান। ক্রীড়া ক্যাটাগরিতে কাজী আবদুল আলীম।
শিল্পকলা ক্যাটাগরিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সফিউদ্দিন আহমেদ, মুর্তজা বশীর। সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে আতাউস সামাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, শহীদুল্লা কায়সার, গিয়াস কামাল চৌধুরী। কূটনৈতিক ক্যাটাগরিতে এম হোসেন আলী ও শাহ এ এম এস কিবরিয়া।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নয়ন নয়, পরিমাণগত বিকাশের সঙ্গে গুণগত উৎকর্ষ যাতে হয়, সেই দিকে অ্যালামনাইরা লক্ষ রাখুন। গুণগত মানোন্নয়নে গবেষণা, প্রকাশনা ও অনুবাদ—এই তিনটি বিষয় নিয়ে প্রাক্তনীদের কাজ করতে হবে। কেবল গবেষণা নয়, গবেষণা হতে হবে সৃষ্টিশীল ও উপকারী। গবেষণার সঙ্গে প্রকাশনাও দরকার। খুব বেশি করে দরকার অনুবাদ; যেটা আমরা করতে পারিনি। ’