ডেস্ক নিউজ
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা সংশয় থাকলেও বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে জয় করে এগিয়ে চলছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে চার বৃহৎ মেগা প্রকল্পের কাজ। এজন্য ব্যয় হচ্ছে ৩১ হাজার ১৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রকল্প চারটি অন্যতম। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের মধ্যে গত প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে মহামারী করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতা। এ কারণে বাস্তবায়নকাজে ধীরগতি দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্তোষজনকভাবেই এগিয়ে চলছে এই প্রকল্পগুলোর কাজ।
নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো হলো, বহু প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্প যার ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া ঘুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প যার ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প যার ব্যয় এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা এবং ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ক্রসবর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের অধীনে চারটি চারলেনের সেতু নির্মাণ। এছাড়া সওজের অধীনে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল সংযোগ সড়ক প্রকল্পের কাজও সন্তোষজনকভাবেই চলছে।
টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ৭১ ভাগ, রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ ৫১ ভাগ ও ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫২ ভাগ, ক্রসবর্ডার নেটওয়ার্ক প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫৫ ভাগ এগিয়ে গেছে বলে গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পগুলোর পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রকৌশলীরা।
মেগা প্রকল্পের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া মিয়ানমার সীমানার ঘুনদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় দুই ভাগে। প্রথম ভাগে বা লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় ভাগের বা লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ শুরু হয় একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে চীনের দু’টি ও বাংলাদেশের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়। দুই হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় প্রথম লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয়েছিল চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে এবং দ্বিতীয় লটে তিন হাজার ৫০২ কেটি পাঁচ লাখ দুই হাজার টাকায় রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশের প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুনদুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন রেলপথ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী ভায়া ঘুনদুম রেললাইন প্রকল্পে রয়েছে ৯টি নতুন রেলস্টেশন দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলহাজার, রামু, ইসলামাবাদ ও কক্সবাজার সদর রেলস্টেশন। ৩৯টি ছোট ও বড় ব্রিজ, ১৭৬টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কার্লভাট (পাইপ কালভার্ট)। এছাড়াও ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থাও সংযোজন করা হবে। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে আইকোনিক রেলস্টেশন নির্মিত হবে যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে প্রথম লটের কাজের মধ্যে চুনতি অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে বন্যহাতি অবাধে চলাচলের জন্য চারটি নিরাপদ পথ তৈরি করা হবে। এর মধ্যে দু’টি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ হবে যা বিশ্বে সর্বপ্রথম বাংলাদেশেই হচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় লটে রয়েছে তিনটি আন্ডারপাস, তা হবে রামু ফুটবল চত্বরে এবং অপর দুটি হবে বাঁকখালী নদীর কক্সবাজার প্রান্তে।
আর এই নতুন রেলপথটি তৈরি করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উভয় দিকে প্রায় এক হাজার ৭৪১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম লটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আনাদ কুনকার্নি বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার রেলওয়ে লাইন স্থাপনসহ ওই লটের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ এগিয়েছে।
গতকাল বিকেলে রেলপথ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, প্রকল্প কাজ চলমান অবস্থায় মহামারী করোনার ধাক্কা প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে। এ ছাড়া কাজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ পর্যন্ত ৬১ ভাগ কাজ গতকাল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় ৩০ জুন ২০২২ এর মধ্যেও শেষ না হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তির আশা করছেন তিনি।