ডেস্ক নিউজ
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’-এর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এ টানেল। তবে উদ্বোধন হলেও যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি উন্মুুক্ত হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘টানেলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজগুলো আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে চাই। উদ্বোধনের বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে উদ্বোধনের পর পরই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত নাও হতে পারে।’
টানেল-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানেলের উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েক মাস পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল করবে। পরীক্ষামূলক যান চলাচলে দ্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসে পুরোদমে যান চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী নভেম্বরের মধ্যে আরও কমপক্ষে ৫ শতাংশ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোরও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করার তাগদা রয়েছে। টানেলের সংযোগকারী তিন সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। পূর্ব দিকে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটারের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। সার্ভিস এরিয়ার বাংলো, দুটি সেতুর ড্রেনেজের অভ্যন্তরীণ রোডের কাজ চলমান রয়েছে। টানেলের প্রয়োজনীয় ৩৭৯ দশমিক ৪৩ একরের মধ্যে ১৪ দশমিক ১৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টানেলের নিরাপত্তার জন্য স্ক্যানার দ্রুত বসানোর কথা থাকলেও ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়নি। এর কারণে টানেল উদ্বোধন হলেও পুরোদমে যান চলাচল করতে কিছুটা সময় লাগবে। এরই মধ্যে টানেল উদ্বোধন কাজ সম্পন্ন করতে ১৩টি উপকমিটি গঠন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হচ্ছে টানেল। এ টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। সরকার বিভক্ত দুই অংশকে একই সুতোয় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারণে নির্মাণ ব্যয় কয়েক শ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্প-কারখানা ও পর্যটন শিল্পে।