ডেস্ক নিউজ
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমবায় ভাবনার আলোকে ‘বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ’ করতে যাচ্ছে সরকার। গ্রামের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত গ্রামীণ জীবনযাপনের সুযোগ ও গ্রাম থেকে শহরমুখী জনস্রোত কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। ‘বঙ্গবন্ধুর গণমুখী সমবায় ভাবনার আলোকে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট প্রকল্প’-এর আওতায় এসব মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা করবে সমবায় অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে দেশের ৯ জেলার ১০টি গ্রামের মোট ৫০ হাজার মানুষ এ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি ১৬ আগস্ট অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনের আলোকে সমবায়ভিত্তিক গ্রাম উন্নয়ন, আইলবিহীন চাষাবাদ, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, আধুনিক মৎস্যচাষ, গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে ৯ জেলার ১০টি গ্রামে এই বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের ধারণাকে সামনে রেখে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’ জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সমবায় অধিদফতর। বঙ্গবন্ধুর সমবায় গ্রাম ধারণা এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের বিশেষ অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ ধারণায় গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে ‘বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ’ প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে ‘৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০’ উপলক্ষে এসব মডেল গ্রাম গড়ে তোলার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এই মডেল গ্রাম তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে দেশের ৯ জেলার ১০ উপজেলার ১০টি গ্রামের গড়ে পাঁচ হাজার জন করে মোট ৫০ হাজার মানুষ প্রকল্পটির উপকারভোগী হবেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, যশোরের মণিরামপুর, রংপুরের মিঠাপুকুর, বরিশালের গৌরনদী ও মুলাদী উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে গ্রামীণ সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, জৈব জ্বালানির ব্যবহার, যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো সৃষ্টি, স্বাস্থ্য-শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কমিউনিটির সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে সব সেবা সহজলভ্য করা হবে। ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সমবায় অধিদফতরের যুগ্ম নিবন্ধক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ দেশের উন্নয়নের বড় অংশ হচ্ছে গ্রাম। প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছিলেন, শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে ১০টি গ্রামকে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলব। সফল হলে দেশব্যাপী বড় আকারে প্রকল্প নেওয়া হবে।’ প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে এসব গ্রামের কৃষি খাতে ২৫ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানো হবে। মধ্যম আয়ের দেশ থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নত দেশের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব গ্রামের ১০ হাজার লোককে দক্ষভাবে গড়ে তুলে করা হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে ১০টি সমবায় সমিতি গঠনসহ প্রায় ৫ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ১০টি কমিউনিটি ভবন নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সমবায় সংগঠিত করা, কৃষি উৎপাদনের যান্ত্রিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন করা, ১০টি গ্রামে দুটি এক একর পুকুরে মৎস্য চাষ ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুটি গরু পালন মডেলের মাধ্যমে আধুনিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন, গ্রামীণ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্জাগরণ ও গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হবে। কমিউনিটি ভবনে বঙ্গবন্ধু পাঠাগার ও বঙ্গবন্ধু কর্নার, কমিউনিটি হল, সমিতির অফিস, সভাকক্ষ, কম্পিউটার কেন্দ্র ও ডিজিটাল সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কেন্দ্র, বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি রাখার গোডাউন, সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। জনপ্রতিনিধি, সরকারি দফতর ও সমবায় সমিতির সমন্বয়ে কাজ চলবে। উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি সেবা দেওয়া হবে গ্রামের জনগণকে। প্রকল্প কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, উপজেলার বিভিন্ন দফতর ও উপকারভোগীদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত গ্রামীণ জীবনের সৃষ্টি হবে। তখন গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের ঢল কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।