ডেস্ক নিউজ
অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে উৎপাদনে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। চলতি বছর মার্চের মধ্যে ৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে বলে জানান বেজা কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে এশিয়ান পেইন্ট, ম্যাগডোনাল স্টিল, মর্ডান সিনট্রেক, জাপানের নিপ্পন স্টিল অন্যতম। জাপানের নিপ্পন স্টিল কম্পানির একটি অটো কার ম্যানুফেকচারিং কারখানা করেছে। ইতোমধ্যে তারা ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে মীরসরাই-ফেনী-সীতাকুণ্ডের ৩০ হাজার একর জমির উপর নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মীরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীল চর, মোশাররফ চর ও পীরের চর, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড অংশের ৩০ হাজার একর চরাঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছেন। মাটি ভরাট করে প্রস্তুত করা হয়েছে ২০০০ একর জমি।
আরও জানা যায়, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে এবং সমুদ্র তীরবর্তী জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে ৪টি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মিত হয়েছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। ইতোমধ্যে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মীরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেনের আরও ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা এভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ। এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগাং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি টাকা, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি টাকা, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি টাকা, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি টাকা এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ।
পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এই গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে পারে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে। সর্বশেষ সউদী সরকারের এক যোগাযোগ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পরিদর্শন করে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এই বিষয়ে বেজার সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন জানান, চলতি বছর মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। এছাড়া সৌদি আরব সরকার এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।