সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বরাদ্দ সরকারি বাসায় না থাকলে বাড়ি ভাড়া ভাতা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যাদের নামে সরকারি বাসা বরাদ্দ হবে তাদের সে বাসায় থাকতেই হবে।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের নামে সরকারি বাসা বরাদ্দ হবে তাদের ওই বাসায় থাকতেই হবে। যদি না থাকেন তাহলে তারা বাসা ভাড়া বাবদ যে ভাতা পান তা পাবেন না।’
বৈঠকে ‘রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আসাদুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো রেইট শিডিউল বা ক্রয় প্রাক্কলন না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এলজিইডি, ওয়াপদা ও সড়ক বিভাগ তাদের রেইট শিডিউল পরিবর্তন করে। অনেকবারই এ রকম পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এমন প্রসঙ্গ তুলে তিনি এ নির্দেশ দেন। কোনো প্রকল্পের প্রস্তাব এলে শিডিউল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কি না তা খতিয়ে দেখতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে মাস্টারপ্ল্যান করারও নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান সচিব।
আসাদুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘ক্যাম্পাসের যেখানে সেখানে যেন অপরিকল্পিতভাবে ভবন তৈরি না করা হয়। এ জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি উপজেলায়ও একটি করে মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেছেন। কারণ যেহেতু আমরা প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়ামসহ অনেক স্থাপনা তৈরি করছি তাই ওই মাস্টারপ্ল্যানে কোথায় কী হবে তা যেন সন্নিবেশিত থাকে। সব এলাকায় যেন প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হয়, বিশেষ করে শিল্প এলাকায় যেন দ্রুত প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প : গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ের পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৩০ লাখ, প্রকল্প সহায়তা থেকে ২ হাজার ৪২ কোটি এবং বাকি ২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। পরিকল্পনা সচিব বলেন, বৈঠকে ‘প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় শিগগির প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মিটার চার্জ হিসেবে বর্তমানে যে ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে তা আগামীতে ১০০ টাকা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো, ‘রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প’। এ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ‘খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প’। এতে ব্যয় বেড়েছে ১১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্প’। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ‘প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। এতে ব্যয় বেড়েছে ২৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
করোনা মোকাবিলায় ৮৮২ হাত ধোয়ার স্টেশন হচ্ছে : কভিড-১৯ মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণজমায়েতের স্থানে হাত ধোয়ার স্টেশন বসাচ্ছে সরকার। দেশের ৩০ জেলার ৯৮ উপজেলায় এ স্টেশন নির্মাণ করা হবে। গতকাল একনেক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ৮৮২টি হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও ১ হাজার ৮৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে বড় পরিসরে ৭৮টি ও কমিউনিটি পর্যায়ে ৩ হাজার ৩৬৪টি পাইপলাইনে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ৮৫২ স্থানে পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহের টয়লেটে রানিং ওয়াটার সুবিধা প্রদান ৭৮০টি ও অতিদরিদ্রদের জন্য ৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি টয়লেট নির্মাণ। এ ছাড়া এ প্রকল্পে কভিড-১৯ রোধে প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহে থোক এবং পরামর্শ সেবা দেওয়ার কথাও রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে।