নাটোরের গুরুদাসপুরের উত্তর নাড়ী বাড়ী গ্রামের ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ জমির উদ্দিন ও তার স্ত্রী ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধা রশিদা বেগমের তিন ছেলে ও ছেলের বৌ নিয়ে সংসার। বিভিন্ন কৌশলে তাদের বসত ভিটার তিন শতক জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিলো ছেলে ও ছেলের বৌ। এরপরে বৃদ্ধ দম্পতি আশ্রয় নিলো স্থানীয় একটি স্কুলের বারান্দায়। খবর পেয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নির্দেশে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ বৃদ্ধ দম্পতিকে স্কুলের বারান্দা থেকে উদ্ধার করে বাড়ীতে তুলে দিলেন। সেই সাথে তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে ছেলে ও ছেলের বৌদের বলেছেন পুলিশ। তবে ছেলে দাবী করেন তারা দাদের মা বাবাকে ভালো ভাবেই দেখাশোনা করেন। এদিকে ছেলের বৌ বেলন তারা যে ভুল করেছেন এমন ভুল কাজ আর করবেন না। তারাও তাদের দেখাশোনা করবেন।
বৃদ্ধ দম্পতির স্বজনরা জানান, তিন ছেলে ও ছেলেও বৌ সহ নাতী নাতনি নিয়ে তিন শতক জমির উপর বসবাস করছিলেন। কিছ দিন পূর্বে ওই বসত ভিটায় পাঁকা বাড়ী করতে গিয়ে কৌশলে ভিটা জমিটি লিখে নেয় ছেলেরা। পরে সেখানে পাঁকা বাড়ী নির্মান করেন। বাড়ী নির্মানের পর বৃদ্ধা বাবা মাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় ছেলে ও ছেলের বৌ। পরে বিষয়টি স্থানীয়রা মিমাংসা করে দেয়। এরপর তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করে এবং গত রবিবার পূনরায় তাদের বাড়ী থেকে বের করে দেয় তারা। পরে বৃদ্ধ জমির উদ্দিন ও রশিদা বেগম আশ্রয় নেয় পাশের একটি স্কুলের বারান্দায়। এরপর পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ীতে তুলে দিয়ে আসে।
বৃদ্ধ দম্পতির মেয়ে কহিনুর বেগম জানালেন, চুরি করে জমি লিখে নিয়ে এখন আর মা বাবাকে কেউ দেখাশোনা করেনা। সবসময় শুধু গালিগালাজ আর মারধর করে। এরআগেও তাদের মা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলো তারা। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে পূনরায় বাড়ীতে তুলে দেয়া হয়।
বৃদ্ধ দম্পতির ছোট ছেলে রতন উদ্দিন বলেন, এটা একটা মিথ্যা ঘটনা। তারা তাদের মায়ের কোন ধরনের অযত্ন করেন না। সবকিছু তারাই দেখাশোনা করেন। কেউ তাদের ফাঁসাতে এই ঘরনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
বৃদ্ধ দম্পতির বড় ছেলে জালাল উদ্দিন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে জানালেন, তিন শতক জমি বাবা মা তাদের নামে লিখে দিয়েছে। তারা তাদের মা বাবাকে ভালো ভাবেই দেখাশুনা করেন। কিন্তু কিভাবে এমন হলো তা তিনি জানেন না।
গুরুদাসপুর পৌরসভা ওয়ার্ড কাউন্সিলার মজিবর রহমান জানালেন, তিনি ঘটনাটি শুনে বৃদ্ধ দম্পতির জন্য প্রাথমিকভাবে যেটুকু সহযোগীতা করার প্রয়োজন তিনি তা করেছেন। এছাড়াও তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থাও করেছেন তাদের জন্য।
এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, তিনি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পান। এরপর সেখান থেকে বৃদ্ধ বাবা মাকে তাদের বাড়ীতে তুলে দিয়ে আসেন। সেই সাথে ছেলেদের সাথে কথা বলে তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। এরপর আর যেন কোন ভাবেই মা বাবাকে নির্যাতন করা না হয় সেদিকেও নজর রাখা হবে।