ওষুধ খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ অংশকে কিনে নিচ্ছে এ দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা। ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪১১ কোটি টাকায় (প্রতি পাউন্ডের বিনিময়মূল্য ১১৫.৮০ টাকা ধরে) সানোফির সিংহভাগ শেয়ারের মালিকানা কিনতে যাচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মা। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ–সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে।
উভয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ খবর গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ৯ মাসের মধ্যে এ অধিগ্রহণ চুক্তি সম্পন্ন হবে। সবার আগে প্রকাশ হয় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলএসই)। কারণ, দুই প্রতিষ্ঠানই এলএসইর অন্তর্ভুক্ত।
সানোফি বাংলাদেশকে অধিগ্রহণের আগে ২০১৮ সালে ওষুধ খাতের অপর বহুজাতিক কোম্পানি নুভিস্তা ফার্মার (সাবেক নাম অরগানন বাংলাদেশ) সিংহভাগ মালিকানা অধিগ্রহণ করে বেক্সিমকো ফার্মা। বর্তমানে এটি বেক্সিমকো ফার্মার সহযোগী কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশের শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো ফার্মা তালিকাভুক্ত কোম্পানি হলেও গতকাল লেনদেন চলাকালে এ খবর দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশ হয়নি। লেনদেন শেষে গতকাল বিকেলে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ কারণে গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দামে তেমন কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি। তবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে এ খবর প্রচারের পর সেখানে সানোফির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কারণ, শেয়ার বিক্রি করে সানোফি বড় অঙ্কের অর্থ পেতে যাচ্ছে। তাতে কোম্পানিটির আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বাজারে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দামে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী রোববার পর্যন্ত। অবশ্য করোনার টিকার ব্যবসার খবরকে কেন্দ্র করে গত ছয় মাসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দাম ১২৩ টাকা বা ১৬৪ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে। গতকাল দিন শেষে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৯৮ টাকা। অথচ গত জুলাইয়েও কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৭০ টাকার আশপাশে।
বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, সানোফি বাংলাদেশের ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে কোম্পানিটি। বর্তমানে এ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে কোম্পানিটির ফ্রান্সভিত্তিক মূল প্রতিষ্ঠান সানোফির হাতে। এ শেয়ারই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কিনে নেবে বেক্সিমকো ফার্মা। এর বাইরে সানোফি বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের হাতে। আর ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা আছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) হাতে।সানোফি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে অধিগ্রহণ চুক্তির আওতায় কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হবেন। এমনকি প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর তিন বছরের চাকরির নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি শেয়ার হস্তান্তরের পরও সানোফি বাংলাদেশ আলাদা কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বর্তমানে সানোফি বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৮০০ জনের বেশি।
জানা গেছে, সরকারি–বেসরকারি যৌথ মালিকানার কোম্পানি হিসেবে এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে সানোফি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথম সানোফি তাদের বাংলাদেশ অংশের মালিকানা বিক্রি আগ্রহ দেখায়। তখন থেকেই ভেতরে-ভেতরে এ কোম্পানিটির এ দেশের ব্যবসা অধিগ্রহণের চেষ্টা শুরু করে বেক্সিমকো ফার্মা। সানোফির কারখানা ও বেক্সিমকো ফার্মার কারখানার ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে কাছাকাছি অবস্থানে। বেক্সিমকো জানিয়েছে, এ অধিগ্রহণের ফলে টঙ্গীতে ২৫ একর জায়গার ওপর অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির কারখানাসহ অন্যান্য ওষুধ তৈরির সানোফির কারখানার মালিকানা পাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ১৯৫৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে সানোফি। তবে শুরুতে এটির নাম ছিল ‘মে অ্যান্ড বেকার’। ২০০৪ সালে এসে সানোফি ও অ্যাভেন্টিস গ্রুপ একীভূত হয়ে এটির নাম হয় সানোফি-অ্যাভেন্টিস। এরপর ২০১৩ সালের নাম বদলে সানোফি বাংলাদেশ রাখা হয়। সানোফি বাংলাদেশ এ দেশের কারখানার বিভিন্ন ওষুধ তৈরির পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা ওষুধও বিক্রি করত। বাজারে সানোফির বহুল প্রচলিত ওষুধের মধ্যে রয়েছে লান্টাস, ফিমোক্সিল, ফ্লাজিল, এভিল ইত্যাদি। হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, টিউমার চিকিৎসা ও চর্মরোগে সানোফির ওষুধ বেশি ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে সানোফি প্রায় ৩৮৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, সানোফি অধিগ্রহণের ফলে বেক্সিমকো ফার্মার আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে।