ডেস্ক নিউজ
ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির পর থেকে যেকোনো শিল্প খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতকেও কার্বনমুক্ত করার আলোচনা চলছিল। গত দুই বছরে কভিড মহামারির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যোগ হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতকে কার্বনমুক্ত করার আন্দোলনও জোরদার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে এবার স্বাস্থ্য খাতকে কার্বনমুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো।
বাংলাদেশসহ ৪৭টি দেশ কপ-২৬ হেলথ প্রগ্রাম অনুসারে, গত সোমবার গ্লাসগোতে নিজ নিজ স্বাস্থ্য খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একে জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি দেশ টেকসই ও কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন স্বাস্থ্য খাত গড়ে তুলবে, যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ১২টি দেশ বলেছে, তারা ২০৫০ সাল বা তার আগে স্বাস্থ্য খাতে নেট জিরো অর্জন করবে। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে যুক্তরাজ্য ও স্পেনের মতো বড় অর্থনীতি, তেমনি রয়েছে ফিজি, মালাউয়ি, সিয়েরা লিওন বা ইয়েমেনের মতো ছোট অর্থনীতিগুলো।
কপ-২৬ হেলথ প্রগ্রাম হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্য সরকার, ইউএনএফসিসিসি ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়নস এবং স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন যেমন হেলথকেয়ার উইদআউট হার্মের একটি যৌথ কর্মকাঠামো।
পরিবেশ ও জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এনজিও হেলথকেয়ার উইদআউট হার্মের কর্মসূচি পরিচালক জশ কারলিনার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা। এর মানে হলো, বিশ্বজুড়ে যে পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়, তাতে একটি মৌলিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য খাতকে মহামারি, অতিমারি ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতি যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বায়ুদূষণ বা দাবদাহ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তাই একে জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য খাতকেও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সমাধানের অংশ হতে হবে, কম কার্বন নিঃসরণ করতে হবে। ডাব্লিউএইচও মহাপরিচালক জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য খাত গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোকে অভিনন্দন জানান।
সরকারের দেওয়া জাতীয় প্রতিশ্রুতি ছাড়াও ২১টি দেশের ৫৪টি প্রতিষ্ঠান এবং ১৪ হাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ইউএনএফসিসিসির ‘রেস টু জিরো’ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে এরই মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে।
জলবায়ুসংকটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা : জলবায়ুসংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলা করতে গেলে ‘নারীর শক্তি, জ্ঞান ও সামর্থ্যকে’ প্রাধান্য দিতে হবে। গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার নারী ও উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা শুরুর আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রকাশিত ‘উইমেন অন দ্য ফ্রন্টলাইন : হিলিং দ্য আর্থ, সিকিং জাস্টিস’ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ুসংকট মোকাবেলার জন্য ক্ষমতা ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ উন্নত বিশ্বের (গ্লোবাল নর্থ) হাত থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের (গ্লোবাল সাউথ) হাতে যেতে হবে। ৭০ শতাংশ জলবায়ু অর্থায়ন স্থানীয় উদ্ভাবনের পেছনে ব্যয় করা উচিত। ক্রিশ্চিয়ান এইড তাদের প্রতিবেদনে ধনী দেশগুলোকে অভিযোজনের জন্য ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে বাড়তি ৫০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির গ্লোবাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রধান ফিয়োনা স্মিথ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মোকাবেলা দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবেলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সংকট মোকাবেলায় নারীর উদ্যোগ ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নতুন নীতিকাঠামো দরকার। এই গ্রহকে বাঁচাতে গেলে পুরনো কাঠামোর একটি নাটকীয় পরিবর্তন করতে হবে।’
জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধের সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অর্থ লিঙ্গ বৈষম্য দূর ও নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে ব্যয় করা উচিত।