ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশের ছয় খাতে সম্ভাবনা দেখছে জাপান। আর এই সম্ভাবনাগুলোকে ‘শক্তির স্তম্ভ’ হিসেবে বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে ‘সিক্স স্ট্রং পিলার্স’ শীর্ষক একটি পরিকল্পনাপত্র সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে দেশটি। জাপান বলেছে, শক্তিশালী এই ছয়টি পিলারের ভিত্তি নির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গী হতে চায় তারা। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে যে মূলধন বা পুঁজির প্রয়োজন পড়বে তা জাপান থেকে সরবরাহ করা হবে, আর বাংলাদেশ দেবে শ্রম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য) উইং এখন জাপান সরকারের এই পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০৪১’ শীর্ষক যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, জাপান তার অংশীদার হতে চাইছে। দেশটি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো পর্যালোচনা করে ছয়টি শক্তিশালী স্তম্ভ বা পিলার নির্বাচন করেছে। এ ছয়টি পিলারের ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক হতে চায় তারা।
ওই কর্মকর্তা জানান, জাপানের উদ্বৃত্ত মূলধন রয়েছে। তারা বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিশ্রমী তরুণ প্রজন্মকে শ্রম খাতের বড় শক্তি বলে মনে করছে দেশটি। বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পায়নের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার যে লক্ষ্য- তাই ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের ‘রূপকল্প-২০৪১’-এ। রপ্তানি বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উৎসাহ দেওয়াই এই রূপকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পরিকল্পনায় জাপান মূলত : সেই রূপকল্প ২০৪১-কে সামনে রেখে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও শক্তির জায়গাগুলোকে পিলার হিসেবে তুলে ধরেছে।
দেশটির পরিকল্পনায় বাংলাদেশের এই ছয়টি পিলার বা সম্ভাবনার ভিত্তি হচ্ছে : (১) ম্যান মেইড ফাইবারে তৈরি উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি (২) মুক্ত বাণিজ্য নীতি গ্রহণ (৩) শিল্পোন্নয়নে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার (৪) গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি (৫) রি-সাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পে বিনিয়োগ এবং (৬) তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটি খাতে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ বা বহুমুখীকরণের বিষয়ে নানা ধরনের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। আবার দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা তুলায় বানানো কম দামি কটন কাপড়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বে এখন কটনের ব্যবহার কমছে। বিপরীতে ম্যান মেইড ফাইবার বা সিনথেটিক কাপড়ে তৈরি উচ্চমূল্যের পোশাকের কদর বাড়ছে। জাপান মনে করছে, বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী শক্তি ও সম্ভাবনার জায়গাটি হবে- ম্যান মেইড ফাইবারে তৈরি হাইভ্যালুড বা উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গুরুত্ব দেওয়া। বাংলাদেশের উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশটি। মুক্ত বাণিজ্য এবং পণ্যের সরবরাহকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছে জাপান। তবে মুক্ত বাণিজ্যে যাওয়ার আগে দেশের শিল্প খাতের মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। জাপান মনে করে মেশিনারিজের মানের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়বে। বাংলাদেশের শিল্প খাতের মানোন্নয়নে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছে জাপান। দেশটি মনে করে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ করে শিল্প খাতে প্রচলিত শক্তির (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) ব্যবহার ভবিষ্যতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। টেকসই শিল্প উন্নয়নে তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করে জাপান। গাড়ি নির্মাণকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে জাপান অন্যতম। দেশটি এসব গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত বিশ্বের শ্রমের উচ্চমূল্যের কারণে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জাপানের মতো দেশগুলো এখন এ ধরনের শিল্প-কারখানা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তর করতে চাইছে। তাই গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ নির্মাণে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় উৎস দেশ হতে পারে বলে মনে করছে জাপান। জাহাজ নির্মাণ শিল্প বা রি-সাইক্লিং শিল্পেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছে জাপান। দেশটির মতে, বাংলাদেশের আরেকটি বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটি শিল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইটি শিল্পে ভারত বিশ্বে এখন শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগানো গেলে ভারতের পর বাংলাদেশ হবে আইটি শিল্পের পরবর্তী উৎস দেশ।