ডেস্ক নিউজ
বঙ্গবন্ধুকে চীনে সর্বদাই পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বের বীজ বপনে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু চীনে সর্বদাই পরম শ্রদ্ধেয়। বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথ ধরেই তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অভূতপ‚র্ব উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়ে একজন মহান নেত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিজের অসামান্য যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। চীন এক নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আগামী দিনে দু’দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।
গতকাল এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এই আলোচনার আয়োজন করে। ’১৫ আগস্ট অ্যান্ড ইট’স আফটারম্যাথ’ শীর্ষক এ বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘দ্য ডার্কেস্ট নাইট অ্যান্ড ইট্স আফটারম্যাথ’ শীর্ষক বুকলেটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির তত্ত্বাবধানে এই অনলাইন আলোচনায় ঢাকায় নিযুক্ত ইন্ডিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশের ৪০ এর বেশি রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং প্রতিনিধি অংশ নেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, চীনের জনগণ তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভিশনারি নেতৃত্বকে বর্তমান বাংলাদেশের মূল্যবোধ নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রথম যুক্তরাজ্য যান। সেখানে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি (বঙ্গবন্ধু) দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সমাজের সবার সমঅধিকার এবং বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে বাস্তবরূপ দিতে সংশ্লিষ্টদের একযোগে কাজ করা উচিত।
বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকান হাইকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) ডিপিএসএন দয়াশেখর বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশ শ্রীলংকা। সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিতে সবার বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধকে অনুসরণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো সবার জন্য মুক্তি, কাউকে পেছনে না পেলে সমতা নিশ্চিত ও টেকসই উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নীতির কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জাতিসংঘ সব সময় পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের (সুইস) রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনার বর্ণনা শুনে গভীরভাবে মর্মাহত বলে জানান। রাষ্ট্রদূত নাথালি আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
পরশের ভয়াল রাতের স্মৃতিচারণ : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের স্মৃতিচারণ করেন শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি তার শৈশব, ১৫ আগস্টের ভয়াল স্মৃতি এবং পরবর্তী সময়ে রিফিউজি জীবনের কথা তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মমতার কথা স্মরণ করে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, খুব ভোরে বুলেটের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, আমি যখন জেগে উঠি বিছানায় শুধু আমরা দুই ভাই ছিলাম। আশেপাশে বাবা-মা কেউই ছিলেন না। চারপাশে গন্ডগোলের শব্দ ছিল। আতঙ্কিত হয়ে আমরা এক ভাই আরেক ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছিলাম। সিড়ির রুমের দিকে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি বাবা-মা নিচে পড়ে আছেন। তারা মারা যাচ্ছিলেন। চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও চাচি আমার বাবা-মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। বাবা কোনো নড়াচড়া করছিলেন না। কিন্তু আমার মা কথা বলতে পারছিলেন। মা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এবং পানি চেয়েছিলেন। আমার মা চাচা-চাচিকে বলেন আমার পরশ-তাপসের কী হবে? আমার বাচ্চাদের দেখে রেখো। এরপর চাচা-চাচি আমাকে আর তাপসকে ভেতরের রুমে নিয়ে নিচে ফ্লোরে শুইয়ে দেন। যাতে আমাদের গায়ে বুলেট না লাগে।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট প্রাণে বেঁচে গেলেও পরবর্তী সময়ে পালিয়ে থাকা, রিফিউজি হিসেবে ভারতে পালিয়ে যাওয়াসহ কষ্টকর জীবনের কথা তুলে ধরেন শেখ ফজলে শামস পরশ।
পরবর্তী উদ্বাস্তু জীবনের কথা তুলে ধরে পরশ বলেন, এরপর থেকে আমাদের উদ্বাস্তু জীবন শুর হয়। একদিন এই বাড়িতে তো আরেক দিন অন্য বাড়িতে পালিয়ে থাকতাম। এভাবে বেশ কয়েক মাস থাকতে হয়। এই সময়টাতে সেনা সদস্যরা আমাদের খুঁজতে আসতো। আমরা যেসব বাড়িতে আশ্রয় নিতাম সেসব বাড়ির লোকজনকে হয়রানি করা হতো। হুমকি দেয়া হতো।
৭৫ এর ১৫ পরবর্তী সময়ে প্রতিকূল পরিবেশে দেশ ছেড়ে পালানোর কথা স্মৃতিচারণ করে পরশ বলেন, আগরতলা দিয়ে প্রথম বার আমরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সফল হইনি। পরে মেহেরপুর দিয়ে দ্বিতীয় বার চেষ্টা করি এবং দেশ ছেড়ে যাই।
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত, কাদা-পানি, জঙ্গলে ভীতিকর পরিবেশে আমাদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল। বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকার কষ্টের কথাও তুলে ধরেন পরশ।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথা স্মরণ করে পরশ বলেন, তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমার সব আবদার থাকতো ওনার কাছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের তিনি স্নেহ করতেন। আমাকেও পছন্দ করতেন, আদর করতেন।
আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, সংগ্রাম, ত্যাগ, কারাগারে বন্দি জীবন এবং বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে তার স্বপ্ন, দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির।