বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও ভুটান। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে ভুটান ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ও নেপাল। বিষয়টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। এদিন একনেক সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ৬৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। একনেকে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছিলেনÑ এ প্রশ্নের জবাবে শামসুল আলম জানান, ‘আমাদের ইন্টারনেটের চাহিদা প্রতিবছর ৭০ শতাংশ বাড়ছে। আমাদের একটি সাবমেরিন ২০২৫ সালের পর অকেজো হয়ে যাবে বা মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এ প্রকল্পটি এখনই গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খুশি হয়েছেন যে, এমন একটি প্রকল্প যথাসময়ে আনা হয়েছে। এটা দিয়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।’
শামসুল আলম আরও জানান, আমাদের পূর্বাঞ্চলে যে সেভেন সিস্টার্স রয়েছে, সেখানে কিছু কিছু ব্যান্ডউইথ সার্ভিস আমরা তাদের দিচ্ছি। এটা আমরা দিতে থাকব। ভুটান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তারা আমাদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনবে। সেক্ষেত্রে আমাদের একটা সুযোগ আছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের। আইসিটির সচিব জানিয়েছেন, সৌদি আরবও ব্যান্ডউইথ আমাদের কাছ থেকে নিতে চাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, তারা কীভাবে নেবে, আমরা মূল লাইন থেকে দেব নাকি কক্সবাজার থেকে? তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, মূল লাইন থেকে সৌদি আরবকে দিতে পারব। এটি বোধহয় আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে যে, তারা কীভাবে নেয় বা আমরা কীভাবে দিই। সেভেন সিস্টার্স ও ভুটানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে, আমরা তাদের যথাযথভাবে সেবা দেব।
‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য বলেন, এখানে ব্যয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিটিসিএলকে লক্ষ রাখতে বলে দুর্গম এলাকাগুলোতে আরও যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বিল, হাওর, চরাঞ্চলগুলোও যাতে আমরা কাভারেজে নিয়ে আসতে পারি। এ বিষয়টি দেখার জন্য বিটিসিএলকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
খেয়ালখুশিমতো রেট শিডিউল পরিবর্তন করা যাবে না : প্রকল্প বাস্তবায়নে রেট শিডিউল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খেয়ালখুশিমতো রেট শিডিউল পরিবর্তন করা যাবে না।
‘নরসিংদী জেলার অন্তর্গত আড়িয়াল খাঁ নদ, হাড়িভাঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা পুনঃখনন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রেট শিডিউল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই অনুশাসন দেন। প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বিষয়টি জানান। তিনি জানান, স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ যথাযথ ব্যয় হচ্ছে কি না তা তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমরা তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে অনেক প্রকল্প বরাদ্দ দিচ্ছি। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ ব্যয় হচ্ছে কি না বিষয়টি নজরদারি করতে হবে। এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করবেন বলে আশ^স্ত করেন।