ডেস্ক নিউজ
গত এক বছরে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ‘দ্বিগুণ বেড়েছে’ বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
মঙ্গলবার মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, “গত এক বছরে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রথম বারের মতো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
“দুই দেশের এই বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিতে আগ্রহী ভারত। এজন্য দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই’র সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্য বাণিজ্য বেড়েছে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৮৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সে বছর ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতে। দেশটি থেকে এসেছে ৮৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ওই বছর ভারতের সঙ্গে ৭৩১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গেছে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দুটি দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে আমদানি হয় ৫৭৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য। সেবছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার।
এফবিসিসিআই’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত লজিস্টিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, অটো মোবাইল ও পোশাকখাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও উন্নত করতে চায় বলে জানিয়েছেন ভারতীয় হাই কমিশনার।
এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “লজিস্টিকস খাতের উন্নয়ন এফবিসিসিআইর প্রধান লক্ষ্য। এখাতের উন্নয়নে সরকারকে ১২ বছরব্যাপী পরিকল্পনা জমা দিতে কাজ করছে এফবিসিসিআই।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এলডিসি পরবর্তী সময়ে পোশাক শিল্পে সুতা ও তুলার বড় যোগানদাতা হতে পারে ভারত।
“বাংলাদেশে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ভালো করছে। তাই বাংলাদেশে অন্যান্য ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও লাভজনক হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।”
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ গত নভেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুমোদন পায়। উত্তরণের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় পাবে বাংলাদেশ।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে স্থলবন্দরগুলোর ভারতীয় অংশের অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “ভারতীয় বন্দরের সুযোগ-সুবিধার অভাবে বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল দ্রুত ও সহজ করতে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে শিগগির আরেকটি নতুন গেট চালু করা হবে বলে জানান ভারতীয় হাই কমিশনার।
বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, তার সরকার দুই দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে আগ্রহী। এজন্য আগামী ফেব্রুয়ারিতে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সমস্যা দূর করতে ভারত-বাংলাদেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের ফোরাম সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলেও জানান ভারতীয় হাই কমিশনার।