নিজস্ব প্রতিবেদক:
লেখাপড়া করার এক অদম্য ইচ্ছে কুরে কুরে খেয়েছে মাসুমা খাতুনকে। কিন্তু সেই ইচ্ছে বুকের মধ্যে চাপা রেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তিনি।১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পরিবার থেকে তার বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। কিন্তু বুকের ভেতরের সেই ইচ্ছে পুরনে অবশেষে তিনি নতুন করে শুরু করেন লেখা-পড়া।চলতি বছর নিজের মেয়ের সাথে একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাসুমা খাতুন। তিনি চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি পেয়েছেন জিপিএ ৪. ১৩ পয়েন্ট। আর তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। মাসুমা খাতুন বাগাতিপাড়া পৌর মহিলা বিএম কলেজের সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স ট্রেডের ছাত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি নিজের মেয়ের সাথে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে মেয়ের সাথে এসএসসি পাশ করেন। এবার সেই মেয়ের সাথে একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। একসঙ্গে পাস করার খবর শুনেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তারা। ভালো ফল করায় তাদের বাহবা দেন সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষকরা।মাসুমা খাতুনের বাবার বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে। বিয়ে হয় বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরে। স্বামী আব্দুল মজিদ আনসার ব্যাটালিয়নে সিপাহি (প্রশিক্ষক) পদে চাকরি করেন। তাঁর কর্মস্থল গাজীপুরে। মাসুমা খাতুনের দুই সন্তানের বড় ছেলে বনি আমিন বাগাতিপাড়া সরকারি ডিগ্রী কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। মাসুমা খাতুন বলেন, ‘বিয়ের ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। পিঠাপিঠি দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ার কথা ভাবারই সময় পাইনি। অবশেষে ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করেছেন তিনি। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে পরিচয় দিতে পারি, সেকারনেই এই বয়সে কষ্ট করে লেখাপড়া করছেন’। মাসুমা খাতুনের স্বামী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘তাঁর জন্য একটু কষ্ট হলেও তিনি তার স্ত্রীর ইচ্ছাটার মর্যাদা দিয়েছেন। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চাইবে তিনি তা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।