নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন। চরম চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় দূর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিলেও সংকট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহন না করে চিকিৎসক সরিয়ে নিতে ওল্টো বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জারিকৃত চিকিৎসক নাজমূল ইসলামকে বদলীর আদেশ নিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরের পাশাপাশি ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে কর্মচারী পদের জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে হাসপাতালটি নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এসব সংকট কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন রোগীরস্বজন ও স্থানীয়রা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৪ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে কাগজে কলমে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন এবং ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতে ৫ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু এসব পদের বিপরীতে মাত্র চার জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন। তারা হলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম, আবাশিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাসেল, মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ ও মেডিকেল অফিসার নাজমুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও চারজন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও বিভিন্ন কারনে তারা হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জন চিকিৎসক দীর্ঘ দিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ইয়াসের আরাফাত ছয় বছর ও মেডিকেল অফিসার মোফাজ্জল শরিফ সাড়ে চার বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দুটি পদে কাউকে নিয়োগ প্রদান করা যাচ্ছে না। প্রেষণে (ডেপুটেশন) রয়েছেন গাইনি ও ডেন্টাল সার্জন পদের দুই চিকিৎসক। এনেসথেশিয়া পদ দীর্ঘ কাল যাবত শূণ্য রয়েছে। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ নাই। এছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারির পদ রয়েছে ১৭টি। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২জন। নার্সদের পদ রয়েছে ১৬ জন, তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৩ জন। অফিস সহকারীর ৩ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন। পরিসংখ্যানবীদের পদটি শূণ্য আছে। টেকনিশিয়ান নাই। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ না থাকায় দরিদ্র এই জনপদের ঐ সমস্ত রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে গড়ে দুর-দুরান্ত থেকে ৫০০-৫৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। প্রয়োজনীয়ও বিভাগীয় চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী সেবা না নিয়েই বাড়ি চলে যেতে হয়। অথবা জেলা শহরে বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরের এই হাসপাতালটিতে এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা দুই বছর ধরে অকেজো। দুটি ইসিজি মেশিন থাকলেও তা দিয়ে তেমন কোন কাজ হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে রোগিদের বাইরের ক্লিনিকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসুতি সেবা কার্যক্রম না থাকায় রোগীদেরকে নাটোর সদর হাসপাতাল অথবা বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে হয়। এ ছাড়া কিছু রোগের পরীক্ষা করা হলেও জটিল রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা হয় না। এদিকে চিকিৎসক-জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের মধ্যেই মেডিক্যাল অফিসার নাজমুল হাসানকে সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বদলীর আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা শুন্যপদের বিপরীতে আরও চিকিৎসক পদায়ন চান। তারা কোন চিকিৎসককে অন্যত্র সরিয়ে নিতে দিতে চান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আমিনুল ইসলাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি সঙ্কেটের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে চরম সঙ্কেটের মধ্যেও রোগীদের সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেও পারছিনা। প্রতিদিন রোগীর ভিড় সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব সমস্যার বিষয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না । তিনি আরো জানান, এত চিকিৎসক সঙ্কটের পরেও কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন ভাবে আবার ডা. নাজমুল হাসানের বদলির আদেশ কোন ভাবেই কাম্য নয়। তিনি এই বদলি বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন।