মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বাড়ি পেয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীন হাজার হাজার পরিবার। নিজস্ব ঠিকানা ও আশ্রয় পাওয়ার জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান করা হয়। সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাড়িগুলো নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিব বর্ষ উদ্যাপনকালে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপকারভোগী এক নারী কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। ২৩ জানুয়ারি সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি গ্রামে
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের পারভীন। তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমি জীবনে কখনো এমন বাড়ি বানাতে পারিনি।’ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে পারভীন আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো কাজ নাই। আমাদের প্রায়ই না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। আমাদের কোনো বাড়ি ছিল না। কখনো ভাবিনি আমাদের একটা বাড়ি হবে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের একটি ঘর ও জমি দিয়েছেন। আপনি অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।’
পারভীনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাঁদবেন না। আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে আমি জনগণের স্বপ্নপূরণ এবং দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না এবং আমি তা নিশ্চিত করব। একই সময়ে যাতে সকল মানুষ জীবন ও জীবিকার উপায় খুঁজে পেতে পারেন, আমি তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
কয়েক দিন আগেও গৃহহীন থাকা মুক্তিযোদ্ধা অশোক দাসও একটি বাড়ি পেয়েছেন। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে মোট ১৪০টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে।
ডুমুরিয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি গ্রাম, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ইকারতলী গ্রাম এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সাল্লা গ্রামের সঙ্গে যুক্ত হন।
সৈয়দপুর উপজেলার নিজবাড়ি গ্রামের একজন সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জমি ও বাড়ি ছিল না। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে আমাকে জমি, বাড়ি, সবকিছু দিয়েছে। আমি আনন্দে অভিভূত। আমি প্রার্থনা করি, আপনি (শেখ হাসিনা) দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন যাপন করুন।’
সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য লেখা একটি ভাওয়াইয়া গান গেয়ে শোনান।
এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার গাড়িচালক চুনারুঘাট উপজেলার ইকারতলী গ্রামের সুবিধাভোগী মো. নুরুল হুদা বলেন, তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে বনভূমিতে বসবাস করতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে জমিসহ একটি বাড়ি দিয়েছেন, যা আমাকে আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সুখে জীবন কাটানোর সুযোগ করে দেবে।’
নুরুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যাতে তিনি আগামী দিনে দরিদ্র, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে আরও সাহায্য করতে পারেন। চুনারুঘাট উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের হাতে মোট ৭৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যান, যেখানে ৩৪০টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ফাতেমা বেগম, যিনি একটি বাড়ি পেয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ঠিকানা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার উপহার (বাড়ি ও জমি) আমাকে একটি ঠিকানা দিয়েছে, যেখানে আমি আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে জীবন কাটাতে পারব।’