ডেস্ক নিউজ:
দলটির নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। স্বাধীনতার পর একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছিল এই দলটি। ক্ষমতায় বসলেও একের পর এক দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষের কাছে দলটি দুর্নীতিবাজ দলে পরিণত হয়। বার বার ক্ষমতায় আসীন দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন নেতৃবর্গ ও কর্মী সমর্থক ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে সীমাহীন লুটপাট করে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে, দলটি জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। দুর্নীতির দায়ে দলের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া দন্ডপ্রাপ্ত হন। তার বড় ছেলে দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান দন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক জীবন যাপন করছেন। এমতাবস্হায় দলটির ভিতরে চলছে লেজেগোবরে অবস্হা। নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ধারা-উপধারায় বিভক্ত। যার প্রভাব পড়ছে কর্মী সমর্থকদের উপর।
একদিকে দলের চেয়ারপারসন কারাগারে আর অপরদিকে তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক থাকায় বিএনপির এখন যাচ্ছেতাই অবস্থা। দলের অভ্যন্তরে লেগেই আছে বিভিন্ন গ্যাঞ্জাম। প্রতিবারই দলের সিনিয়র নেতারা ঈদের পর খালেদাকে জেল থেকে বের করে আনার আন্দোলনের ডাক দিলেও কাঙ্ক্ষিত সেই ঈদ এখনো বিএনপিতে আসেনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও ভরাডুবি হয় তাদের। মাত্র ছয়টি আসন পায় বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ঐক্যফন্টের আসনও। একের পর এক কূল হারিয়ে ইতোমধ্যে দিশেহারা হারিয়েছে বিএনপি।
সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতারা। এর মধ্যে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
১লা সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সমাধিতে ফুল দিতে যান ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিনিয়র নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলে যাওয়ার পর ফুল দেওয়ার সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একে অপরকে কিলঘুষি মারেন। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাছিদ আঞ্জুর পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয়। পরে খালি গায়ে জিয়ার মাজার এলাকা ত্যাগ করেন আঞ্জু।
বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বিগত দিনে থানা কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা, পকেট বাণিজ্য করে সংগঠনকে শেষ করে দিয়েছেন। এখনো তারা সেই কাজটিই করছেন। এর সঙ্গে নতুন করে আসন্ন (উত্তর) সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন করতেও বাণিজ্য শুরু করেছেন। তারা কাউন্সিলর নির্ধারণ করতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে প্রত্যেক থানা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা এসব অভিযোগ বিএনপির হাইকমান্ডকে অবগত করলেও কোনো সমাধান হয়নি। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেই এ ঘটনা ঘটে।
শুধুমাত্র ঢাকাকে কেন্দ্র করেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে মারামারিতে জড়িয়েছে যুবদলের দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা হাতাহাতি ও মারামারির পাশাপাশি পরস্পরের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলা এই বিশৃঙ্খলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে।
রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরীর নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনের মাঠে এই ঘটনা ঘটে। সেখানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশের আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। বিএনপি ও যুবদলের নেতারা জানায়, বিকেলে যুবদলের প্রোগ্রাম ছিল না। বিএনপি সকালে বিপ্লব উদ্যানে সমাবেশ করেছে। বিকেলে বিএনপির প্রোগ্রামে যুবদলেও নেতাকর্মীরাও গিয়েছিলেন। যুবদলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের একপাশে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ করে ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপ মিছিল নিয়ে সেখানে আসে। তারা বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এতে বিএনপির দুজন আহত হয়েছে।
এছাড়াও সারা দেশেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে দল ও দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে।