বিচারে দীর্ঘসূত্রতা আর গাফিলতিই ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ। আইনে ১৮০ দিনে মামলার বিচারকাজ শেষ করার কথা থাকলেও তার দৃষ্টান্ত খুবই কম।
বিচারিক আদালতে দ্রুততার সাথে দু-একটি মামলার রায় হলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে আটকে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দেশে ধর্ষণের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ধরনেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন।
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশজুড়ে আলোচনা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের নির্যাতিতা গৃহবধুকে ঘিরে। এসব ছাড়াও গেলো কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী- মাদ্রাসার শিক্ষক চার্চের ফাদারসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এসেছে ধর্ষণের অভিযোগ। হয়েছে মামলা।
আইন সালিশ কেন্দ্র বলছে গেলো কয়েকমাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৬টি। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪৬২৭ টি আর গেলো বছর ২০১৯ সালে ৫৪০০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
সমাজবিজ্ঞানী সালমা আকতার বলেন,’বিচারহীনতা যে কোন ক্রাইমকে উস্কে দেয়। শুধুমাত্র ধর্ষকদেরকে ধরা হয়েছে বলে নিউজ আছে। তারপর আমি আর দেখিনি তাদের কি পানিশমেন্ট হয়েছে। যারা রেপিস্ট তাদেরকে সোস্যাল হ্যারাসমেন্টের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ন্যাশনাল আইডিতে, পাসপোর্টে সিল দিয়ে দেয়া হয়, হি ইজ এ রেপিস্ট, ইজ এ হ্যারাসিস্ট, তাহলে যেটা হবে, সে কোন সোস্যাল এনভায়ারমেন্টে সোস্যাল ডিগনিটি নিয়ে বাঁচতে পারবে না।’
আইন সালিস কেন্দ্রের আইনজীবী বলছেন, কোনো ঘটনা আলোচিত হয়ে সবার নজরে আসলেই কেবল সেগুলোর বিচারকাজ দ্রুত হয়। উদাহারণ হিসাবে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার আইডিয়াল ল কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা রুপার ঘটনা। দ্রুত বিচার শেষ হওয়ার দৃষ্টান্ত হলেও হাইকোর্টে আটকে আছে মামলাটি।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ বলেন,’একটানা যদি চলে তবে মামলায় এতদিন তো লাগার কথা না। ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু আমরা তো করছি না। এই যে নোয়াখালীর যাদেরকে ধরেছে, আপনি দেখেন ১৫ দিনের মাঝে পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পেরেছে কিনা?’
ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু- এমনকি বৃদ্ধা। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছে এটা আসলে সামাজিক বিপর্যের বড় বার্তা। আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নীনা গোস্বামী বলেন,’ক্রসফায়ার দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয় না। যেমন মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। এটা ভুল।’
ফৌজিয়া করিম ফিরোজ ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে বলেন,’ক্রসফায়ার চাইছেন তখন দেখা যাবে সব কিছুর জন্যই ক্রসফায়ার চাইছে সবাই। এটা কি ঠিক হবে। একটি অন্যায়ের জন্য আরেকটি অন্যায় চাইবো না আমরা।’
বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এবং গাফিলতির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষককে ক্রসফায়ারে দেওয়ার দাবি ওঠলেও আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।