আসন্ন পৌরসভার প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, যারা অতীতে পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে। বিদ্রোহী ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ছিল, তাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। সভাসূত্র জানায়, এই ২৫টি পৌরসভার মধ্যে দুজন বিদ্রোহীসহ ৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই নজির তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কোনো বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
গত নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন তাদের বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য সভায় বলেন, দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না। তাদের এই বক্তব্যের সম্মতি প্রকাশ করে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এই সতর্ক বাণীর পরেও যদি আসন্ন নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে, তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোডিডের দ্বিতীয় ওয়েভেও অতীতের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। নিজে সতর্ক থেকে অন্যকে সতর্ক করে তুলতে হবে।
কোভিড ইস্যুতে কেউ যেন জনমনে ভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
সভাশেষে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের মনোনীতদের তালিকা জানানো হয়। সেই তালিকার সূত্র ধরে ২৫টি পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুরের বদরগঞ্জে বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন। তার পরিবর্তে এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের সাবেক পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। তার পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাজিউল ইসলামকে।
পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলালকে এবারও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সাখো। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বর্তমান মেয়র হালিমুল হক নিরুর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মনির আক্তার খান তরু লোদীকে। খুলনার দাকোপে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আল মাছুম মুর্শেদকে। বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র তারিকুল ইসলাম তারিক। চুয়াডাঙ্গাতেও বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুল রহমান চৌধুরী। সেখানে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ারর্দার।
মানিকগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিম। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রমজান আলীকে। গত নির্বাচনেও দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাদ পড়েছেন বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া। এ পৌরসভায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বজিৎ রায়কে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছালেক মিয়া বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র মো. মাসুদুউজ্জামান মাসুককে।