নারায়ণগঞ্জে বন্দরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভাড়াটিয়া এক বিধবা নারীকে (৩৫) একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই বাড়ির মালিকের ছেলে খোকা মিয়ার (৩০) বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হলে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদের বাড়িতে গ্রাম্যসালিশে ধর্ষককে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে দফারফা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর ধর্ষকের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ করেছেন ওই নারী ও এলাকাবাসীরা।
সোমবার রাতে বন্দর উপজেলার দড়িসোনাকান্দা এলাকায় কাউন্সিলর তার নিজ বাসভবনে সালিশে বসে এ রায় ঘোষণা করেন। জরিমানার টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধের সময় নির্ধারণ করে নির্যাতিতার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষরও রাখেন সালিসে উপস্থিত মাতব্বর শ্রেণির লোকজন।
এলাকাবাসীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বন্দরের দড়িসোনাকান্দা এলাকায় তিন সন্তানের জননী বিধবা নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে বাড়িওয়ালার ছেলে খোকা মিয়া। একপর্যায়ে রোববার রাতে বিধবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে খোকা মিয়া আবারও ধর্ষণ করে। পরে ওই বিধবা নারী রাতেই ঘটনাটি স্থানীয় ব্যক্তিদের জানান। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদের শরণাপন্ন হন ধর্ষক খোকা মিয়ার মা। বিষয়টি মীমাংসা করতে সোমবার রাতে নারী কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ তার বাস ভবনে সালিস বিচারের আয়োজন করেন। সালিসে কাউন্সিলর শিউলি নওশাদ ধর্ষক খোকাকে ৬০ হাজার জরিমানা ধার্য করে রায় ঘোষণা করেন।
নির্যাতিতা ওই নারীর অভিযোগ করেন, এই বাড়িতে ভাড়া আসার পর থেকেই বাড়িওয়ালার ছেলে খোকা তাকে নানাভাবে বিরক্ত করত। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বিয়ে নিয়ে টালবাহানা করায় শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ থাকে। রোববার রাতে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে খোকা। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানানো হয়।
ওই নারী বলেন, সোমবার রাতে কাউন্সিলর শিউলি আপার বাড়িতে বিচার সালিসে খোকাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এক মাস পর টাকা দেয়ার কথা বলা হলেও আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় মাতুব্বরা। তবে এই সালিসে ন্যায়বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন এ নারী।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর শিউলি নওশাদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার কবে বলেন, আমি খবর পাই বিধবা নারীকে বাড়িওয়ালার ছেলের বউ রাস্তায় মারধর করেছে। আমার কাছে নালিশ আসে। যেহেতু আমার কোনো অফিস নেই তাই রাতে আমার বাড়িতে তাদের নিয়ে বসি। তখন মারধরের অপরাধ বাবদ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে বিচার সালিসে বিধবা নারী বাড়িওয়ালার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুললে আমি এই বিচার করতে পারব না বলে পঞ্চায়েতের লোকজনের ওপর ছেড়ে দেই। ওই নারীকে আমি বলি থানায় গিয়ে বিচার চাইতে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি মো. ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া সময় নিউজকে বলেন, বিধবা নারীকে ধর্ষণের ঘটনা আমার জানা নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বিষয়টি খুবই অমানবিক হয়েছে দাবি করে বন্দর থানার ওসি বলেন, এমন ঘটনা কখনো মীমাংসার যোগ্য না। ক্ষমারও যোগ্য নয়। এর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আমি ওই নারীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখব। তিনি অভিযোগ দিলে অবশ্যই অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।