ডেস্ক নিউজ
করোনা মোকাবেলায় পথের ভিক্ষুক, দিনমজুর কিংবা শিল্পপতি সবার জীবন ও জীবিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজে। আপদকালীন এ কর্মসূচীর আওতায় বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ এবং বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প ও সেবা খাতে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করবে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে পৌনে ৭৩ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের মধ্যে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য গঠন করা হবে পৃথক তহবিল। আর প্যাকেজের বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট থেকে। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্যাকেজ ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার সবাই বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত করোনাভাইরাসে কাবু হওয়া অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চার প্যাকেজের প্রণোদনা রফতানি খাতের পাশাপাশি উৎপাদনমুখী ও সেবা খাতে ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের শিল্প কারখানার জন্য সহায়ক হবে। এই প্রণোদনা প্যাকেজ করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে সহায়ক হবে।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজকে স্বাগত জানাই। এই প্যাকেজ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষি ও সেবাভিত্তিক খাতের উদ্যোক্তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। আপাতত প্রধান লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকা- স্বাভাবিক করা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্যাকেজ সহযোগী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এখন ব্যক্তি ভোগ ও আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। তাই সরকারী ব্যয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এতে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতিশীলতা একসঙ্গে চলতে থাকবে। আমরা মনে করি, সরকার নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন করোনাভাইরাসের কারণে কোন ব্যক্তি চাকরি হারালে তার ৬ মাসের জন্য বেতন-ভাতার ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার। এর মানে হলো, একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকেই ফোকাস করছে সরকার। যেখানে সবাইকে কভার করে। একই সঙ্গে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে যাতে কেউ চাকরি না হারায়। আমরা জানি এ বছরটা আমাদের একটু কঠিন যাবে। তবে আমাদের বিশ্বাস সরকারী-বেসরকারী অংশীদারত্বের মাধ্যমে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করে এই কঠিন সময় উত্তরণে সক্ষম হব।
এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এটা আমাদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া। আমাদের জন্য এ দিনটি উৎসবের মতো। আমরা জানতাম সরকার প্রণোদনা দেবে, কিন্তু সঠিক সময়ে এত বেশি পরিমাণে দেবে, সেটা কেউ ভাবিনি। তিনি বলেন, এমন একটা তহবিল দরকার ছিল। এখানে আরেকটি বিষয়ে উল্লেখ করার মতো, সরকার যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ মূল্যায়ন করে ও যতœশীল সেটা প্রমাণ হলো। কারণ সুদের ক্ষেত্রে বড় উদ্যোক্তারা এসএমই উদ্যোক্তাদের চেয়ে কম সুবিধা পাবেন। এর মানে সরকারের এসএমইর প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে। এখন দেখতে হবে, এই টাকাটা যেন তারা ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিমালা যেন সহজ করা হয়।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ প্রস্তাবে এমএসইর জন্য আলাদা তহবিল দিয়েছেন। এটা বিরাট ব্যাপার। কারণ দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে এসএমই উদ্যোক্তারা মূল ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করব বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের উপযোগী করে একটি সহজ নীতিমালা দেয়, যেন তারা সহজেই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেন।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন, ‘করোনাভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বৈশি^ক এই সঙ্কটে সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় এই আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আবাসন খাতের জন্য বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আবাসন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক শিল্প খাত। এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এ খাতে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তাই আবাসনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যান্য খাতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এতে অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, পোল্ট্রি খাত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। প্রধানমন্ত্রীর এই প্যাকেজে আমরা খুবই খুশি। আশা করি, এই কম সুদের ঋণ মূলধন পেয়ে গ্রামে-গঞ্জে অনেকেই নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় বলতেই হয়, ছোট উদ্যোক্তারা বাঁচলে আমরা বাঁচব। এ জন্য আহ্বান করব, সহজ শর্তে যেন এই ঋণ পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অত্যন্ত সময়োচিত ও বিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ। সাধারণ জনগোষ্ঠীসহ খেটে খাওয়া মানুষ এবং বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তারে সম্ভাব্য বিশ^ মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বিভিন্ন বিভাজনকে আমরা ইতিবাচক মনে করছি। প্রণোদনা প্যাকেজের বিভিন্ন বিভাজনে যে পদক্ষেপ তথা সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণের অর্ধেক সুদ প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে তা প্রথম ও যুগান্তকারী। তিনি বলেন, সরকার সুদে ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত হবেন, যা করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে সরকারের আশা অনুযায়ী অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ বিসিক শিল্প মালিক সমিতির উর্ধতন সহসভাপতি হোসেন এ সিকদার বলেন, দেশের সব বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাগুলোতে দক্ষ, আধা দক্ষ, অদক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার ৬২০ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত আছেন। আর এসব শিল্প কলকারখানায় মালিকদের প্রায় ২৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশব্যাপী লকডাউন থাকায় বিসিক শিল্প এলাকায় বর্তমানে সব উৎপাদনমুখী কলকারখানা বন্ধ রয়েছে। ফলে এই বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্যাকেজে আমরা খুবই খুশি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের এসব তহবিল বাস্তবায়ন করবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। তারা যেন ছোট-বড় উদ্যোক্তার সমন্বয় করে সঠিক নিয়মে ঋণ সহায়তা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলার জন্য ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যেসব প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এটি বাস্তব সম্মত। এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তবে আশঙ্কা রয়েছে এটি বাস্তবায়ন নিয়ে। কারণ, এসব তহবিলের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ হিসেবে দেবে বিতরণের জন্য। বলা হয়েছে, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতেই ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। এখন ব্যাংক কাদের ঋণ দেবে, এটা দেখার বিষয়। যাদের ঋণ দেবে তারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কিনা? এই বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী’ বলেন তিনি। ‘করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকের আমানত কমে যাবে। ফলে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমবে। এ অবস্থায় ঋণ বিতরণ কিভাবে করবে। তহবিলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে কোন ধরনের নিয়মনীতি কি করা হচ্ছে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।’ এটি ভালভাবে বাস্তবায়নের জন্য সঠিক নীতি ও তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
একই ধরনের পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই প্যাকেজে বড় শিল্পের জন্যই বেশি বরাদ্দ রয়েছে। তবে এসএমইর (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল রয়েছে, এটা ভাল। কিন্তু এ তহবিলের ঋণ বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। এখন তারা কিভাবে তা পালন করবে, এটাই দেখার বিষয়। কারণ, বড় শিল্প সবসময় বড় অঙ্কের ঋণ নেয়। ব্যাংকগুলোও ওসব ঋণ দিতে বেশি আগ্রহ দেখায়। ফলে সবসময় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হয়। তাই ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা যেন ঋণ পান, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে। পাশাপাশি যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা সঠিক পরিমাণে ঋণ পাচ্ছে কিনা, এটাও দেখভাল করতে হবে’ বলছিলেন তিনি। ‘এসএমই খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ সুদহার আরও কম দেয়া গেলে বেশি ভাল। প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণায় বড় শিল্পের প্রণোদনা থাকলেও কৃষি ও খাদ্য নিশ্চিতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন ছিল। এ পরিস্থিতিতে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বেশি জোড় দিতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এটি না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন হলে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে সঠিক নির্দেশনা দেয়া জরুরী।’
এ সময় অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানিয়ে সাবেক এই গবর্নর বলেন, ‘যারা প্রাতিষ্ঠানিক তারা কিছু সুবিধা পাবেন। তবে এখন সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় থাকা ছিন্নমূল অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকদের বিষয়ে আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারের উচিত সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো। কারণ, এখন যে ১২ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ আছে, তা খুবই সামান্য। এটি শীঘ্রই বাড়ানো দরকার।’
প্যাকেজ বাস্তবায়নে পৃথক তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ॥ করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে পৌনে ৭৩ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের মধ্যে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য গঠন করা হবে পৃথক তহবিল। আর প্যাকেজের বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট থেকে। পাশাপাশি প্যাকেজের ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং বাকি ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার প্যাকেজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই প্যাকেজের আওতায় দেশের বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প ও সেবাসহ মৎস্য, ডেইরি, পোল্ট্রি খাতও তাদের চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। মূলত ৪-৬ মাসের জন্য এই ঋণ দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে প্যাকেজের অর্থ ফেরত দিয়ে নতুনভাবে আবার ঋণ নিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্যাকেজের ব্যবহারের নীতিমালা করবে, যাতে সুষ্ঠুভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়।
প্যাকেজ ঘোষণার পর এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশেষ করে এ অর্থের ব্যবহার, উপকারভোগীর শ্রেণী, প্যাকেজ থেকে ঋণ নেয়া ও পরিশোধের সময়সহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা নিয়ে নীতিমালা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি খুব শীঘ্রই জারি করা হবে। এরপর প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে সরকারী ও বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, পৌনে ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের আওতায় যে ঋণ দেয়া হবে, সে ক্ষেত্রে সুদহার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। এ জন্য ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে। এর মধ্যে শিল্প ঋণের সুদে ভর্তুকি ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, এসএমই ঋণের ভর্তুকির পরিমাণ হবে ১ হাজার কোটি টাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইডিএফ তহবিলের সুদের ভর্তুকি ৩১০ কোটি টাকা, বাকি ভর্তুকি দেয়া হবে প্যাকেজের অন্যান্য খাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, ঋণের সুদ পরিশোধে সরকার ভর্তুকির টাকা পরিশোধ করবে চলতি বাজেট থেকে। শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে ঋণ দেয়া হবে মূলত শিল্প প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন হিসেবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার হবে ৯ শতাংশ। শিল্প ঋণের প্যাকেজের আওতায় সুদ বাবদ এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হিসাবে অর্ধেক ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা শোধ করবে সরকার এবং বাকি অর্থ শোধ করবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। এ ক্ষেত্রেও ৯ শতাংশ হারে সুদ বাবদ আসবে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে সরকার ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে। এতে ১ হাজার কোটি টাকা সরকার ও বাকি ৮০০ কোটি টাকা সুদ দেবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা।
ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) সাড়ে ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫শ’ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। দেশীয় মুদ্রা তহবিলের আকার হচ্ছে ৪২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। এতে নতুন যোগ হচ্ছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সুদের হার ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ হিসাবে এই তহবিলে মোট সুদ আসে ১ হাজার ১৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু সরকার সুদের হার দশমিক ৭৩ শতাংশ হ্রাস করে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে সুদ খাতে হ্রাস পাবে ৩১০ কোটি টাকা। এটি ভর্তুকি হিসেবে সরকার পরিশোধ করবে। উল্লেখিত প্যাকেজ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রেফারেন্স স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা চালু করবে। এই তহবিলের সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। এ ক্ষেত্রে শিল্প মালিকরা ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে এ ঋণের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।