ডেস্ক নিউজ
নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী কোনো নির্বাচনি এলাকার মধ্যে বহিরাগত কেউ থাকতে পারবেন না। অর্থাত্ শুধু ভোটাররাই সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। তবে দেড় কোটি মানুষের শহর রাজধানী ঢাকায় ভোটার ৫৪ লাখ। আইন অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢাকা শহর ছাড়ার কথা। কিন্তু পুলিশের অভিযান শুরুর আগেই বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী রাজধানী ছেড়ে চলে গেছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে তারা এলাকা ছাড়ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সন্ত্রাসী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে যৌক্তিক কারণ থাকলে ঢাকা শহরে বাইরের মানুষও থাকতে পারবেন—এমনটাই বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আতঙ্ক ছড়ানো আমাদের উদ্দেশ্যে নয়। শুধু অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই অভিযান চলছে।’
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছেন, পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেফতার করছে। ইতিমধ্যে দুই ডজনের মতো নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফলে ভয়ে অনেকেই এলাকায় থাকছেন না। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট কীভাবে সম্ভব—প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে গেলে বুধবার সকালে ওয়ারী থানায় তিন যুবদল কর্মী বুলবুল, নাইম ও আনোয়ারকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। তারা কোথায় আছে কেউ জানে না। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বলধা গার্ডেনের সামনে থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন প্রচারণা চালানোর সময় নয়াবাজার এলাকা থেকে পুলিশ ফিরোজ আলী নামে একজন যুবদল নেতাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশী জোনে, ওয়ারী থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ারী স্ট্রিটে, হাজারীবাগ থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে, পোস্টার লাগানোর সময় শাসক দলের লোকজন ধানের শীষের প্রার্থীর লোকজনকে মারধর করে এবং অনেক জায়গায় পুলিশে সোপর্দ করে।
১৫ জানুয়ারি প্রচারণা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২৬ জানুয়ারি মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বাসায় ফেরার পথে হামলা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ঐ ঘটনায় বিএনপির মামলা না নিয়ে উলটো বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে এখন ভয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। শুধু তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে যারা অস্ত্রধারী এবং নির্বাচনে সহিংসতা করতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কে কোন রাজনৈতিক দলের তা আমাদের দেখার বিষয় নয়, কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কী বললেন সেটাও দেখার বিষয় না। সন্ত্রাসী যদি হয় তাহলে সেটা নির্বাচনের আগেই কী আর পরেই কী? সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করবে পুলিশ। তবে নির্বাচনকালে পুলিশের অতিরিক্ত মুভমেন্ট তো থাকেই।
ডিএমপি কমিশনারও বলেছেন, আমরা গণঅভিযান চালিয়ে মানুষের মনে ভীতি ছড়াতে চাই না। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাতে ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ এসেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা এসব লোকজন সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বা কোনো মামলা আছে কি না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে শুধু তাদেরই ধরা হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী একাধিক মামলার আসামি। তাদের মধ্যে অনেকেরই বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। দুই সিটির নির্বাচনকে ঘিরে শুধু বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরই গ্রেফতার করতে মরিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস-নাশকতার ছক কষছে বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচন বিতর্কিত করাই এর উদ্দেশ্য। এই নির্বাচনে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচন ঘিরে বেড়ে গেছে ভাড়া করা সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের আনাগোনা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন জমে ওঠায় বিতর্কিত নির্দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার তাপ বাড়ছে। নির্দলীয় বিতর্কিত প্রার্থীদের পক্ষে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের ভাড়া করে এনে সহিংসতার জন্ম দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাননি এমন নির্দলীয় বিতর্কিত প্রার্থীদের পক্ষে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার তথ্য আছে তাদের কাছে।
তৃণমূলের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে যে হত্যা, সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন দাগি আসামিরা এরই মধ্যে ঢাকায় আছে। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের হয়ে মিছিলসহ নানা আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা ঢাকায় কোথায় অবস্থান করছেন সেটাও গোয়েন্দাদের কাছে অনেকে বলে দিয়েছেন। মতিঝিল, খিলগাঁও, ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় বহিরাগতরা মিছিলে ঢুকেছে। যশোর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে অনেক ক্যাডার ঢাকায় ঢুকেছে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে অনেক অস্ত্র এখন পাড়া-মহল্লার সন্ত্রাসীদের হাতে এসেছে।