ডেস্ক নিউজ
সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্টজন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষতার বোধ ধর্মহীনতা ছিল না। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই তিনি ধর্মকে রাজনীতি থেকে পৃথক রাখার কথা বলেছেন। এটি অনুসরণ করা হলে যুদ্ধ-সন্ত্রাস-সংঘাতকবলিত বর্তমান বিশ্বে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। আর এই ধর্মনিরপেক্ষতা বোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও তুরস্কের জনক মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের আদর্শ ও নীতি একে অপরের পরিপূরক।
গতকাল বুধবার ‘আতাতুর্ক ও বঙ্গবন্ধু :মানবতার বাতিঘর’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজন এসব কথা বলেন। তুরস্কের জনক মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ এর আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান এবং তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান এনডিসি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, তুরস্কের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ফেরহাত আতিক, সংগীতশিল্পী জান্নাত-ই-ফেরদৌসী, তুরস্কের সাংবাদিক আহমেত জোশকুনায়দিন, তুরস্কের গবেষক এলিফ বালি কুরতারির, সংগঠনের সর্বইউরোপীয় শাখার সভাপতি তরুণকান্তি চৌধুরী, যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবি হক, ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগীয় সম্পাদক ভারতের সাংবাদিক তাপস দাস এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি।
ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মস্তফা ওসমান বলেন, তুরস্কের জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। কামাল আতাতুর্কের পররাষ্ট্রনীতি ‘ঘরে শান্তি তো বিশ্বে শান্তি’ ও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি নির্দেশ করে; যা শুধু আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছে।
তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের ব্যবস্থা করছেন। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, আতাতুর্ক ও বঙ্গবন্ধুর মানবতা ও মুক্তির দর্শন বিশ্বের নিপীড়িত জনগণকে স্বাধীনতা ও সার্বিক মুক্তিসংগ্রামে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা জোগাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাম্প্রতিককালে যেভাবে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বাড়ছে, যেভাবে ধর্মের নামে গণহত্যা হচ্ছে, সন্ত্রাস ও নির্যাতনসহ মানবতার বিরুদ্ধে যাবতীয় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- এর মোকাবিলা করতে হলে দেশে দেশে আতাতুর্ক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তরুণ সমাজকে আলোকিত ও উজ্জীবিত করতে হবে।
কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন যুগ যুগ ধরে আলোর পথ দেখাবে বাংলাদেশকে।
বিশ্ব মানবতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু ও আতাতুর্ক উভয়েই নিজ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার
মাধ্যমে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলস অবদান রেখেছেন।