ডেস্ক নিউজ
জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘বীর মুক্তযোদ্ধা’ খচিত উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বিদায়ী নির্বাচন কমিশন।
নিজেদের মেয়াদপূর্তির আগের দিন রোববার ঢাকার এক হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এ স্মার্টকার্ড তুলে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় সিইসি নূরুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
পর্যায়ক্রমে সব মুক্তিযোদ্ধার কাছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
সহযোদ্ধাদের প্রসঙ্গ টেনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদা বলেন, “দেশের প্রথিতযশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, দেশের জন্য তাদেরকে এমন স্মার্টকার্ড দিতে পারা ইসির জন্য গৌরবের।”
মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি ব্যবহারের বিধান করে ২০২০ সালে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গেজেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ধারা ২(১১) এ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
সিইসি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত কার্ড করা সহজ ছিল না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটা করা হয়েছে। পাসপোর্ট, ভাতা পাওয়াসহ নাগরিক সেবা বিবেচনায় নিয়ে স্মার্ট কার্ডে নামের আগে এটা যুক্ত করা যায়নি। বিশেষভাবে মাইক্রোচিপের নিচে আলাদাভাবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ যুক্ত করা হয়েছে কার্ডে।
নিজেদের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে দীর্ঘদিনের এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরে বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, “আজ এখানে অনেকে এসেছেন, অনুষ্ঠানকে ধন্য করেছেন। এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আমাদের নির্বাচন কমিশনের বড় পাওয়ার, এর চেয়ে বড় অর্জন, বড় আনন্দের আর কিছু থাকে না। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আমাদের সম্মানিত করেছেন। বড় গর্বের বিষয়।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়, যা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রচনা করেছিলো মুক্তিযোদ্ধারা। তারা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, মর্যাদা দিয়েছেন। জাতিকে দিয়েছেন বীরত্বের তকমা। তাদের অবদান ভুলে গেলে চলবে না। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান তুলে ধরতে হবে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে।”
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে গণতন্ত্রেরর মূল ভিত্তি নির্বাচন, সেজন্যই তার সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (বাংলা পাঠ) এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ এর মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী।
সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ মন্ত্রী স্মার্টকার্ড তুলে দেন।
প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), শাহজাহান সিদ্দিকী (বীর বিক্রম), খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রানা দাশগুপ্ত, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শেখ শহীদুল ইসলাম, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, এসএম আনোয়ারা বেগম, শাহীন সামাদ, মো. রফিকুল আলম, রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রাশিদুল আলম, সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ স্মার্টকার্ড গ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তবে অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এই কার্ড বিতরণ শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এই কার্ড তুলে দেওয়া হবে।