- অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে
বগুড়ার শেরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হলো শস্যের ক্যানভাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ ‘শস্য চিত্রে বঙ্গবন্ধু’। শস্য চারা রোপণের মাধ্যমে শুক্রবার শৈল্পিক ও নান্দনিতায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রপ ফিল্ড মোজাইক বা শস্য চিত্র গড়ে তোলার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। কৃষকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা ভাবনাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বের দরবারে বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন ও আরও উচ্চতর মাত্রায় তুলে ধরার জন্য এই কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই শস্য চিত্র হতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্য শিল্পকর্ম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর নাম শস্য শিল্পকর্মে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। শস্য চিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার এর উদ্বোধনী আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে ঐতিহাসিক কৃষি শিল্পকর্মের অংশ হয়ে যাওয়া বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুরের ছোট্ট গ্রাম বালেন্দা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে যেতে চোখে পড়বে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের খেত। এ ধরনের ফসলের মাঠই হয়ে উঠতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কৃষি শিল্প কর্মে বিশ্ব রেকর্ডের অংশীদার। মোট ১২০ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্র গড়ে তোলা হচ্ছে। মূল শিল্পকর্মের ক্যানভাস গড়া হচ্ছে ১০৫ বিঘা জমি জুড়ে। এ ধরনের এত বড় শস্য চিত্র বিশ্বের আরও কোন স্থানে হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে চীনে গড়া হয়েছিল ৭৫ বিঘা জমিতে একটি শস্য চিত্র। যার আয়তন ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। আর বগুড়া শেরপুরের বালিন্দায় বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্রের আয়তন দাঁড়াচ্ছে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্র সম্পন্ন হলে এটিই হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কৃষি শিল্প কর্ম বা ক্রপ ফিল্ড মোজাইক। শস্যর ক্যানভাসে জাতির পিতার মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে দু’ ধরনের ধানের চারা ব্যবহার হচ্ছে। একটি সবুজাভ সোনালি আর অন্যটি বেগুনি রঙের। এই ধান চারা দিয়ে আঁকা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি। ইতোমধ্যে ফিল্ড ট্রায়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে লে আউট অনুযায়ী চারা রোপণ। ১০ জনের নক্সা বিদের একটি টিমের সঙ্গে প্রায় ১০০ জনের বিএনসিসি টিম লে আউটের কাজ শুরু করেছেন। লে আউট অনুযায়ী দু’ ধররের চারা রোপণের পর বিভিন্ন সময়ে এই শস্য ক্যানভাসে জাতির পিতার পোট্রেট ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় উদ্ভাসিত হবে। সেই সঙ্গে রচিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি নিয়ে এক নতুন ইতিহাস।
এই কৃষি শিল্পকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা জানালেন, নবেম্বরে চারা গাছ এনে পরিচর্যা শুরু হয়। এখন তা রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়েছে। সবুজ চারা সোনালি এবং বেগুনি চারা কালো রংয়ের মতো বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবিতে ফুটে উঠবে। কর্মীরা জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনে মধ্যে পুরো ক্যানভাসে চারা রোপণ সম্পন্ন হবে। এর পরই ফুটে উঠতে শুরু করবে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব। আগামী মার্চ নাগাদ এটি পরিপূর্ণতা পাবে।
বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্রের শিল্প কর্মের উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই শেরপুরের ভবানীপুরের ছোট্ট গ্রাম বালেন্দা জুড়ে লোকজনের মধ্যে ছিল নানা কৌতূহলমুখী উৎসব। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে সাধারণ লোকজন সেখানে আসেন কৃষি শিল্পকর্মটির কর্মযজ্ঞ দেখতে। পাশের বিরশা গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র কিশোর আবু রায়হান এসেছিলেন বালেন্দা মাঠে। যেখানে বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্রের কাজ চলছে। রায়হান সঠিক জানে না সেখানে কি হবে। তবে এটি জানে বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু হবে। আশগ্রামের মহির উদ্দিন জানালেন, তার বয়সে গ্রাম জুড়ে এমন ব্যস্ততা ও কর্ম উৎসব দেখেননি। বঙ্গবন্ধুর জন্য তার গ্রামে কিছু হচ্ছে এটিই তার ভাল লাগছে। এটি পুরো এলাকার জন্য গর্ব। শুক্রবার দুপুরের আগে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই শস্য চিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চারা রোপণের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শস্য চিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ সমির চন্দ। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, তানভির সাকিল জয়, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পদক রাগবুল আহসান রিপু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন কৃষক দরদী বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক শস্য চিত্র গোটা জাতিকে গর্বিত করবে। বঙ্গবন্ধু কৃষক ও মেহনতী মানুষের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। মাটি ও ধান ক্ষেতের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর এই শস্যচিত্র এক নতুন ইতিহাস রচনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে আরও অনন্য উচ্চতায় বিশ্বের নিকট তুলে ধরবে।