ডেস্ক নিউজ
নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের ২ হাজার ৪৫৯টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করেন ৭ লাখ ১ হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ শিল্প কারাখানা । তবে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন না মালিকরা। গত কয়েকদিন ধরেই বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করে আসছেন নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারাখানার শ্রমিকরা।
এদিকে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ১৬ এপ্রিল বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর চলমান এই বন্ধের মধ্যেই শ্রমিক ছাঁটাই ও “লে-অফ” ঘোষণা করছে মালিক পক্ষ।
কারখানা মালিকদের এমন কর্মকাণ্ডে বিপাকে পড়েছে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
জেলা শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের ২ হাজার ৪৫৯টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করেন ৭ লাখ ১ হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ১ হাজার ৬০ জন ও নারী শ্রমিক রয়েছেন ৩ লাখ ৩৪৪ জন।
বর্তমানে ২ হাজার ৩৭৬টি কারখানাই বন্ধ রয়েছে, সচল রয়েছে ৮৩ টি।
বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএভুক্ত ১৫ শতাধিক কারখানার মধ্যে এখন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করেছে ৪ শ’র কিছু বেশি সংখ্যক কারখানায়। আর বিজেএমইএভুক্ত ২৬৯ টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করেছে ৭১টি প্রতিষ্ঠান।
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, নারায়ণগঞ্জে চলমান লকডাউনে সব ব্যাংক বন্ধ থাকায় বেতন দিতে দেরি হচ্ছে। আর শ্রমিক ছাটাই প্রতিমাসে নিয়মানুযায়ী হয়ে থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত ছাটাই না করার জন্য মালিকদের বলা হয়েছে।
তবে সরকারি এসব নির্দেশনায় খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই কারখানা মালিকদের। তাই লকডাউন উপেক্ষা করে প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নামছেন শ্রমিকরা।
বকেয়া বেতনের দাবি ও ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন- সদর উপজেলার সস্তাপুর এলাকায় এ্যাবলুম নিট ডিজাইন লিমিটেড, ফকির নিটওয়্যার, ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফতুল্লা কাঠেরপুল এলাকার টাইমস সোয়েটার লিমিটেড, কুতুবআইল এলাকার প্যারাডাইজ ক্যাবলস , সিদ্ধিরগঞ্জের আল আমীন গার্মেন্টস, মুনলাক্স অ্যাপারেলস ,আরএজেড গার্মেন্টস ও সোনারগাঁয়ের টিপরদী এলাকার চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা।
রবিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন এ্যাবলুম নিট ডিজাইন লিমিটেডের শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, “কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর ১২ এপ্রিল বেতন নিতে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু আজকে এসে দেখি ২ এপ্রিল পর্যন্ত যাদের কারখানায় যোগদানের বয়স ১ বছরের নিচে তাদের কোনো বেতন দেওয়া হবে না।”
এমন পরিস্থিতিতে অনাহারে থাকতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
একইদিনে (রবিবার) বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ফকির নিটওয়্যার, চৈতি গার্মেন্টস, মুনলাক্স অ্যাপারেলস ও আরএজেড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা।
প্রায় প্রতিদিনই লকডাউন ভেঙে শ্রমিকরা কখনও মহাসড়ক অবরোধ, কখনওবা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছেন।
এর আগে ১১ এপ্রিল ১০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ফতুল্লা কুতুবআইল এলাকাস্থ প্যারাডাইজ ক্যাবলসের শ্রমিকরা। গত ৭ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাঠেরপুল এলাকার টাইমস সোয়েটার লিমিটেডের সহস্রাধিক শ্রমিক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ পোশাক কারখানাই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে ছাটাই ও বন্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সভাপতি এমএ শাহীন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ আমাদের কাছে ফকির এপারেলস লিমিটেডের একাধিক শ্রমিক তাদের প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের অভিযোগ করেছে । তাদের মার্চের বেতন পরিশোধ করলেও লে অফ ঘোষণা করে কারখানায় যারা ৬ মাসের কম সময় কাজ করেছে তাদের ফোন করে ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “অথচ করোনাভাইরাস সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার গার্মেন্টস কারখানার জন্য বড় অঙ্কের প্রণোদনা দিয়েছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?”
তিনি জানান, এমন শত শত কারখানা রয়েছে। কিন্তু আমরা কেবল হাতেগোনা কয়েকটি কারখানার সমস্যা শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সহসভাপতি (অর্থ) মো. মোরশেদ সারোয়ার জানান, “নারায়ণগঞ্জ পুরোটাই লকডাউন। সব ব্যাংক বন্ধ থাকায় মালিকরা টাকা তুলতে পারছেন না। তাই বেতন দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।”
বিষয়টি সমাধানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে বলেও জানান সারোয়ার।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিমাসেই কারখানাগুলোতে শ্রমিক পরিবর্তন হয়। কোনো শ্রমিক চলে যায় অথবা কাজে অপারদর্শী হওয়ায় ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। তবে চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই না করার জন্য আমরা কারখানা মালিকদের বলেছি।”