ডেস্ক নিউজ
দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় সরকারি সংস্থার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) ছাড়াও এখন করোনা টিকা সংরক্ষণে যুক্ত হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস। বিমানে টিকার চালান আসার পর তাপমাত্রা বিবেচনায় এসব কোম্পানির ওয়্যারহাউজে রাখা হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকা সরক্ষণে জায়গার কোনো সংকট হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চার ধরনের টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। গোড়াতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। ধাপে ধাপে মাডার্না, ফাইজার, সিনোফার্ম এসেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় প্লাস ২ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। স্বাস্থ্য অধিপ্তরের তথ্য বলছে, এই টিকা সংরক্ষণ হচ্ছে বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা ও বিএসডিসি ওয়্যারহাউসে। এসব হাউজে সব মিলিয়ে তিন কোটি টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব।
মাডার্নার টিকা মাইনাস ২৫ সেন্টিগ্রেড রাখা হয়। তবে এটিকে একবার গলানোর পর ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সরক্ষণ করা যায় এক মাস পর্যন্ত। এই টিকা দেশে এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ সংরক্ষণ করা যাবে।
এ ছাড়া ফাইজার মাইনাস ৭০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংগ্রহ করা যায়। আর একটি গলানোর পর প্লাস ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সংরক্ষণ করা সম্ভব। দেশে এই টিকা ৩৫ লাখ ডোজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। তবে এই টিকা সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকেও যুক্ত করা হয়েছে।
জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে বিনামূল্যে টিকা সংক্ষণে কাজ করছে দেশের বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি টিকা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আমরা আগে থেকেই যুক্ত ছিলাম। আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেক্সিমকো ওয়্যারহাউজে সংরক্ষণ করা হতো। সিরামের টিকার মতো করে সিনোফার্মের টিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আমাদের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী এই টিকা জেলা-উপজেলাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সরকার আমাদের টিকা সরক্ষণের জন্য অনুরোধ করছে।’
এ জন্য আলাদা করে বেক্সিমকোকে টাকা দিতে হবে কি না এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘আলাদা কোনো টাকা দিতে হবে না। সরকারের অনুরোধে এই কার্যক্রম করা হচ্ছে।’
সংরক্ষণের ঝামেলা কমাতে টিকাদানের পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দিনে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া প্রয়োজন। এই পরিমাণ টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে হলে টিকাকেন্দ্র বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে দুই শিফটে টিকা দেয়া যেতে পারে। তাহলে একদিকে যেমন টিকা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে হবে না, অন্যদিকে টিকা দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ৯২০ ডোজ। এর মধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে মোট ২ কোটি ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮০ ডোজ। এর মধ্যে এক ডোজ নিয়েছেন এক কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৬৬৯ জন এবং টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩১১ জন।
এগুলো দেয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের তৈরি সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন। ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট গণটিকা দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এই সময়ে দুই ডোজ মিলিয়ে ৫৮ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দেশে মোট তিন কোটি টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের মধ্যে ৬ কোটি টিকা আসবে। এইসব টিকা সংরক্ষণের সামর্থ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় ইপিআইয়ের স্টোরের রয়েছে। বেক্সিমকো ফার্মা, ইনসেপ্টা ও বিএসডিসি ওয়্যারহাউসেও টিকা রাখা হয়েছে। যেহেতু সিনোফার্মের টিকা সংরক্ষণে বেশি জায়গার প্রয়োজন সে কারণে চীনের সব টিকা বেক্সিমকো ফার্মা ওয়্যার হাউজে রাখা হচ্ছে। তাদের ব্যবস্থাপনার পাঠানো হচ্ছে জেলা উপজেলাতে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘টিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি বা সংরক্ষণ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। যেসব টিকা দেশে আসছে, আমরা ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি। যেহেতু অনেক টিকা আমাদের হাতে এসেছে, সেই কারণে টিকাদান কর্মসূচিকে আমরা বেগবান করতে চাচ্ছি, যাতে করে আমাদের সংরক্ষণের জায়গাগুলো পরিপূর্ণ না হয়ে যায়।’