ডেস্ক নিউজ
যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) পর্যালোচনায় ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের উন্নতি ঘটেছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের গণতন্ত্রের সূচকের অবনমন ঘটলেও গত বছরের তুলনায় একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিচার করে বুধবার ইআইইউ এই সূচক প্রকাশ করেছে। ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্র সূচক-২০২১ এ আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের নাগরিক স্বাধীনতার অগ্রগতি সূচকে উন্নতিতে অবদান রেখেছে।
ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এই সূচক পাঁচটি মানদণ্ড— নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে স্কোরের ১০ ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়।
এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে; বলছে ইকোনমিস্ট।
২০২১ সালের এই সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তিউনিসিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ৭৫তম। গত বছর এই সূচকে একই স্কোর নিয়ে ৭৬তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৫ দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম ছিল। একই সূচকে ২০১৮ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।
এবারের এই সূচকে ৯ দশমিক ৭৫ স্কোর নিয়ে গত বারের মতো সবার ওপরে আছে নরওয়ে। নিউজিল্যান্ড আছে দ্বিতীয় স্থানে, স্কোর ৯ দশমিক ৩৭। ৯ দশমিক ২৭ স্কোর নিয়ে ফিনল্যান্ড আছে তৃতীয় স্থানে। এরপরই আছে ৯ দশমিক ২৬ স্কোর নিয়ে সুইডেন (চতুর্থ), পঞ্চম স্থানে আইসল্যান্ড (স্কোর ৯.১৮), ৬ষ্ঠ স্থানে ডেনমার্ক (স্কোর ৯.০৯), ৭ম স্থানে আয়ারল্যান্ড (স্কোর ৯.০০৭), ৮ম তাইওয়ান (স্কোর ৮.৯৯), অস্ট্রেলিয়া এবং সুইজারল্যান্ডস যৌথভাবে নবম (স্কোর ৮.৯০) এবং নেদারল্যান্ডস ৮.৮৮ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে আছে।
২০০৬ সালে প্রকাশিত প্রথম গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়। ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। এর পরের বছর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে বাংলাদেশ মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ঢুকে যায়। তখন থেকেই ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিউটের বিচারে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশ রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার ভূটান (৫.৭১ স্কোর), নেপাল (৪.৪১ স্কোর), পাকিস্তান (৪.৩১ স্কোর) মিশ্র গণতন্ত্রের তালিকায় রয়েছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬ দশমিক ৯১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে আছে ভারত, দেশটির অবস্থান গত বছর ৫৩তম থাকলেও এবারে ৪৬তম স্থানে উঠে এসেছে। ১৬৫ দেশের এই তালিকায় ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান আছে ১০৪তম স্থানে।
এরপর আছে শ্রীলঙ্কা; ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৬৭তম। গত বছর একই স্কোর নিয়ে দেশটি ৬৮তম অবস্থানে ছিল। গত বছরের মতো ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান ৮১ অপরিবর্তিত আছে। ১০১তম স্থানে থাকা নেপালের স্কোর ৪ দশমিক ৪১।
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়াকে হটিয়ে এবারের এই তালিকার একেবারে তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া গত বছর ১ দশমিক ০৮ স্কোর অবস্থান ১৬৭তম স্থানে থাকলেও এবার দেশটির দুই ধাপ উন্নতি ঘটেছে।
গত বছরের মতো একই স্কোর নিয়ে উত্তর কোরিয়া এবারে ১৬৫তম স্থানে উঠে এসেছে। আর ১৬৭তম স্থান পাওয়া আফগানিস্তানের স্কোর ০ দশমিক ৩২। এছাড়া ১ দশমিক ০২ স্কোর নিয়ে ১৬৬তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার।
ইআইইউ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র আরও সংকুচিত হয়েছে। ২০২০ সালে সালে বিশ্বের গড় স্কোর ৫ দশমিক ৩৭ থাকলেও এবারে তা কমে ৫ দশমিক ২৮ হয়েছে। ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট গণতন্ত্রের এই সূচক ২০০৬ সালে প্রকাশ শুরুর পর থেকে এবারই বিশ্বের গড় স্কোর সবচেয়ে কম।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের গণতন্ত্রের গড় স্কোরের অবনতি ঘটেছে অথবা স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্বের মাত্র ৪৭টি দেশে (২৮ দশমিক ১ শতাংশ) গণতন্ত্রের উন্নতি ঘটেছে।