ডেস্ক নিউজ
প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পিরোজপুরের মানুষ। স্বপ্ন পূরণের বাকি আর মাত্র ১৪ দিন। ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্রুত সংযোগে যুক্ত হতে যাচ্ছে পিরোজপুরবাসী। সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এক নয়া ইতিহাস।
কেননা গত কয়েক দশকে এই জনপদের মানুষের জন্য পদ্মা সেতুই সব থেকে বড় প্রাপ্তি ও আনন্দের খবর। এই সেতু হলে সব ক্ষেত্রে পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সেতুবন্ধ সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা পিরোজপুরবাসীর।
দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষের জীবনে পদ্মা সেতু স্থাপন করতে যাচ্ছে আধুনিক যোগাযোগের বন্ধন। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে এই আনন্দের জোয়ার। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু যোগাযোগেই নয়, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হবে। সাফল্যের প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে।
কিছুদিন আগেও পিরোজপুর থেকে রাজধানী ঢাকা পৌঁছাতে হতো শুধু লঞ্চ-স্টিমারে করে। সময় লাগত কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা। এরপর নতুন মাত্রা যোগ হয় সড়ক পথে। পিরোজপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছাত। সেখান থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তুলে দেওয়া হতো লঞ্চে। আবহাওয়া ভালো থাকলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর ওপারের শিমুলিয়া প্রান্তে বেশ কিছু পথ হেঁটে গিয়ে উঠতে হতো অপেক্ষমাণ নতুন বাসে। এতে যাত্রীদের পোহাতে হতো সীমাহীন দুর্ভোগ। অসুস্থ রোগীদের জন্য এই পথে যাতায়াত ছিল দুঃসাধ্য। একই রুটে ফেরি পারাপারে আরো দুই থেকে তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যেত। এ ছাড়া উৎসবের সময় ফেরি পার হতে কখনো ২৪ ঘণ্টাও লেগে যেত।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, অসীম সাহস ও আত্মবিশ্বাসের নাম পদ্মা সেতু। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে খুলে যাবে যোগাযোগের নতুন দ্বার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু একটি সাধারণ সেতু নয়। এটি এই অঞ্চলের মানুষের লালিত স্বপ্ন আর বহু প্রতীক্ষার ফসল।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ছিল গ্রাম হবে শহর। এই পদ্মা সেতু সেই ঘোষণার বাস্তব রূপ দেবে। এই সেতুর ফলে পিরোজপুর থেকে ঢাকা হবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ। সময় যেমন বাঁচবে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য সরবরাহ সহজ হবে। অর্থনীতির চাকা হবে গতিশীল। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় লাগবে আধুনিকতার ছোঁয়া, যা ছিল আমাদের আজন্ম স্বপ্ন, তাই আজ বাস্তবতা। পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু ঢাকা নয়, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও স্থাপিত হবে নতুন সেতুবন্ধ। ’
ঢাকা-পিরোজপুর রুটের বাসচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন হাওলাদার বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের কাছে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো। যাত্রীদের কত ভোগান্তির সাক্ষী হয়েছি আমি। সেতু খুলে দিলে আট ঘণ্টার পথ সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারব। এ সুখবর বড় আনন্দের। আমাদের অনেক দিনের চাওয়া পূরণ হতে চলেছে। ’ নিয়মিত বাসযাত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই রুটে কখনো উন্নত আধুনিক পরিবহন চলাচল করেনি। কিছুদিন পর এই অঞ্চলে উন্নত পরিবহনসহ সব ধরনের আধুনিক যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। গড়ে উঠবে শিল্প-কলকারখানা। প্রসার ঘটবে পর্যটন শিল্পেও। অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে চাঙ্গা হবে শ্রমবাজার। ’