ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ থেকে ১০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ আমদানি করে ভারত। মাঝে টেকনিক্যাল কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে আবারও ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি আরও ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে চায় ভারত। এর টেস্টরান শেষ হয়েছে। যেকোনও দিন নতুন ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ যেতে পারে ভারতে।
এদিকে ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহী। দেশটি বাংলাদেশের কাছে কম দামে ব্যান্ডউইথ নিতে চাইলে মূল্যের বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ভুটান। এখন এ সম্পর্কিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই বাংলাদেশ থেকে ভুটানে ব্যান্ডউইথ যাবে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে নেপালও ব্যান্ডউইথ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে সাবমেরিন ক্যাবলবিহীন এই দুটি দেশে ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে। নেপাল তাদের কারিগরি ও কৌশলগত সমস্যা দূর করতে পারলে তারা বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ থেকে ভুটান ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে সম্মত হয়েছে। ভারত ও সৌদি আরবের পর ভুটান আমাদের ব্যান্ডউইথ নিলো। আশা করি, ভারতে রফতানি দ্বিগুণ হবে। সৌদি আরব ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে। আশা করছি, মালয়েশিয়াতেও আমরা ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ হাব হাতে চায়। যেসব দেশের সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই, সেসব দেশে ব্যান্ডউইথ রফতানি করে ওইসব দেশে কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহারের নির্ভরতার অপর নাম হতে চায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে (সেভেন সিস্টার্স) ভারতের কলকাতা, চেন্নাই বা মুম্বাই থেকে ব্যান্ডউইথ আনতে অনেক অর্থ খরচ হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারনেট চার্জ বেশি পড়ে। গতিও তেমন বেশি পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ সেভেন সিস্টার্সের দিকে নজর রেখেছে। ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যান্ডউইথ রফতানি করে সেদিকে খানিকটা অগ্রসরও হয়েছে বাংলাদেশ। এখানে আখাউড়া সীমান্ত হয়ে ব্যান্ডউইথ যায় আগরতলায়। এই অংশ দিয়েই অতিরিক্ত আরও ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ যাবে ত্রিপুরায়। এই রুটেই এখন কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
নিজের নাম পরিচয় উদ্ধৃত না করে তিনি বলেন, বিএসসিসিএল’র সর্বশেষ বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৬) সক্ষমতা ৬ দশমিক ৬ টেরাবাইট থেকে বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ২ টেরাবাইট করা হবে। ২০২৫ সালে এই ব্যান্ডইউথ বাংলাদেশে যুক্ত হবে। তিনি আরও জানান, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের ভ্যালু ৭০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ১৫০ কোটি টাকা যোগ করলেই বাংলাদেশের সক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এরইমধ্যে প্রকল্প অনুমোদনও হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে, সাবমেরিন ক্যাবল-২ এর পশ্চিম দিকে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ থেকে সৌদি আরব নিয়েছে ৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। ফ্রান্সের অরেঞ্জ টেলিকম নিয়েছে ১৩ জিবিপিএস। মালয়েশিয়াও বাংলাদেশের অ্যবহৃত ক্যাপাসিটি থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরইমধ্যে লেটার অব অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক চুক্তি হওয়ার অপেক্ষা।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব যে ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে, তা বাংলাদেশের আন-ইউজড ক্যাপাসিটি, যাকে ডার্ক ক্যাপাসিটিও বলা হয়। এই ক্যাপাসিটি ইনঅ্যাক্টিভ অবস্থায় থাকে। যাদের প্রয়োজন হয় তারা অ্যাক্টিভেট করে নিচ্ছে। বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্ব অংশটি বহুল ব্যবহৃত হলেও পশ্চিমাংশের ব্যান্ডউইথ পুরোপুরি অব্যবহৃত থাকে, যার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ টিবিপিএস (টেরাবাইটস পার সেকেন্ড)। সাবমেরিন ক্যাবলের পূর্ব অংশ দিয়ে ডাটা ট্রাফিক যায় ৯৯ শতাংশ।