ডেস্ক নিউজ
দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও পেতে যাচ্ছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে দেশের সব ইউনিয়নে সংযোগ পৌঁছানোর পর এখন তা গ্রামের ঘরে ঘরে পৌঁছানের কাজ চলছে। সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে সরকার গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়াতে চায়। আউটসোর্সিংসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষকে যুক্ত করার পাশাপাশি সরকারি সেবার একটি অংশও মিলবে অনলাইনে। গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চুক্তি করা হবে। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত সংযোগ ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইসিটি বিভাগের অধীন স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি (ইডিসি) প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে গ্রাম পর্যায়ে এক লাখ ১০ হাজার কানেকটিভিটি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভূমি অফিস, অন্যান্য সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন গ্রোথ সেন্টার আছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক কেবল নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে আমরা ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম, যার মাধ্যমে প্রায় সব ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে গেছে। এই উদ্যোগে ১০ কোটি মানুষকে কানেকটিভিটির আওতায় আনা হচ্ছে। এতে আউটসোর্সিংসহ অন্যান্য কাজে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও জিডিপি ১ শতাংশ বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ১৮ হাজারের বেশি সরকারি দপ্তরকে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত করেছি। এর ধারাবাহিকতায় ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সে সময় আমাদের সরকার যদি এসব অবকাঠামো প্রস্তুত না করত তাহলে মহামারির এই সময়ে কী অবস্থা হতো তা সহজেই অনুমেয়। মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সব নির্দেশনা দিয়েছেন। সচিবালয়সহ দেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর এখন ইন্টারনেটে সংযুক্ত। আমাদের লক্ষ্য ইউনিয়ন পর্যন্ত সব দপ্তরকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করা।’
আইসিটি বিভাগের অধীন ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সামিট কমিউনিকেশনস ও ফাইবার অ্যাট হোম। এর আওতায় দেশের সব ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) বিপিও সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। গ্রামে তথ্য-প্রযুক্তি সেবার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি এবং দারিদ্র্য ও ডিজিটাল বৈষম্য রোধ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রামবাসীর জন্য সরকারের সেবা উন্নত করাসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে ইনফো সরকার-৩-এর প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় সব ইউনিয়নই এখন হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকটিভিটিতে যুক্ত। এখন সেবার ক্ষেত্রে ‘লাস্ট মাইল কানেকটিভিটি’ (ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে চূড়ান্ত ব্যবহারকারীদের কাছে) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে আগামী মাসেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্যাপাসিটি থাকবে। সঙ্গে থাকবে রাউটার। এর মাধ্যমে অন্যান্য সরকারি অফিস কানেক্ট করতে পারবে। ই-কমার্স, ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়নসহ শিক্ষার ডিজিটাইজেশন হবে। মানুষকে উৎসাহিত করতে আমরা সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এক বছর ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছি।’
ইন্টারনেটের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ইন্টারনেটে ভর্তুকি দিয়ে হলেও আমরা শহরের চেয়ে যাতে খরচ বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি সংযোগে একটি আইএসপি কম্পানির ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে লাগতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে আমরা দুই হাজার সংযোগ দিতে পারব, যা আইএসপিরা বাড়ি বাড়ি লাইন টেনে ইন্টারনেট পৌঁছে দেবে। সরকারের পক্ষে গ্রামে গ্রামে তিন কোটি বাড়িতে সংযোগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, লাইন রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব না। সে কারণে আমরা আইএসপির মাধ্যমে এই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছুটা ভর্তুকি দিয়ে আইএসপিদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
জুলাই মাস নাগাদ গ্রামে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সে জন্য পিপিপি মডেলে একটি চুক্তি হবে এবং এর পরই নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জিডিপি প্রায় ১ শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করছি।’