ডেস্ক নিউজ
শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা এবং শ্রেণীকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে চলছে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ। এ লক্ষ্যে ২০২২ সালে শিক্ষাক্রম পাইলটিংয়ের পর ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রক্তদাতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিকে ১০০টি আর মাধ্যমিকে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং শুরু হচ্ছে। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে, টিচার্স গাইড তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকে এ কার্যক্রম সারাদেশে নিয়ে যাব। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করব। ২০২৫ সালে সারাদেশে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আসছে। পঞ্চম শ্রেণীর পিইসি, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি নামে পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পাশাপাশি নবম ও দশম শ্রেণীতে মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায়শিক্ষা নামে বিভাগ তুলে দেয়া হবে।
জানা যায়, পরিমার্জিত নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতির চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা রাখা হয়নি। শুধু তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্তই নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়ন রাখা হয়েছে বড় অংশে। আবশ্যিক বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়া হবে। দেয়া হবে সনদ। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নবম ও দশম শ্রেণীর বই আলাদা করা হয়েছে। দশম শ্রেণীর পাঠ্যবই পড়িয়েই এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। অর্থাৎ এসএসসির ও সমমান পরীক্ষার আগে আর কোন পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না। উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বই আলাদা করা হয়েছে, পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। দুই পরীক্ষা ও মূল্যায়ন সমন্বয় করে ফলাফল দেয়া হবে বলেও জানা যায়।
নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী এর আগে বলেন, নতুন এই কারিকুলামে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বলা আছে। শিখন সময় প্রাথমিকে কতটা, মাধ্যমিকে কতটা হবে তা-ও বলা আছে। প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম-২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০, সেগুলো সম্পর্কেও এই কারিকুলামে বলা আছে।
তিনি জানান, আগামী বছরই প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাইলটিং করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করা হবে। মাধ্যমিকের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছয় মাস পাইলটিংয়ের পর আমরা বিশ্লেষণ করতে পারব। ২০২৩ সালে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করতে পারব। ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে এটি চালু হবে। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণী। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণী ও মাধ্যমিকের দশম শ্রেণীতে বাস্তবায়ন করা হবে
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও দেয়া হবে। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীকে পাবলিক পরীক্ষা বলছি না। প্রাথমিক শেষে একটা এবং অষ্টম শ্রেণী শেষে একটা সনদ পাবেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী ছাড়া সব শ্রেণীতে শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষা হবে। শুধু তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন ধরনের পরীক্ষা থাকবে না। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতেও সনদ দেয়া হবে।
নবম দশম শ্রেণীতে বিভাগ বিভাজনও থাকবে না বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, নবম ও দশম শ্রেণী আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা করে পরীক্ষা হবে। শুধু দশম শ্রেণীতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নবম ও দশম শ্রেণীর বই আলাদা হয়ে যাবে। কোন বিভাগ বিভাজন থাকবে না। সব শিক্ষার্থীই ১০টি বিষয় পড়বে।