ডেস্ক নিউজ
নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব দেশের দিকেই এখন দৃষ্টি বাংলাদেশের। প্রতিবেশী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। এ ছাড়া ভারতের নিজস্ব উদ্যোগের ভ্যাকসিনও আছে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে আলোচনায় ভ্যাকসিনের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত বলেছে, তাদের ভ্যাকসিন চূড়ান্ত হলে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ।পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার নেতৃত্বে গতকাল বুধবার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্কিং লাঞ্চ’ শেষে উভয় পক্ষ সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছে।
গতকাল আলোচনা হয়েছে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালানো এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে দুই দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা-সমন্বয়ের বিষয়েও। সীমান্তে হত্যার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আগামী মাসে ঢাকায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। দুই দেশেরই মূলধারার গণমাধ্যম, নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তিকর, কাল্পনিক ও নেতিবাচক খবরের বিষয়েও উভয় পক্ষ পরস্পরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্পর্কের উন্নততর অবস্থার বিষয়ে সাংবাদিকদের আরো তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্তি এড়ানোর চেষ্টার কথা বলেছে উভয় পক্ষ।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর এবারের ঢাকা সফর স্বল্প সময়ের জন্য হলেও অত্যন্ত সন্তোষজনক। গত মঙ্গলবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে বলেছেন, কভিড পরিস্থিতির কারণে তিনি কারো সঙ্গে দেখা করছেন না। এরই মধ্যে সাক্ষাৎদেওয়ায় দৃশ্যত উচ্ছ্বসিত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব।
শ্রিংলা বলেন, ‘আমি যে কারণ এসেছি তা হলো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) মনে করেছেন কভিডের সময়ে তেমন যোগাযোগ হচ্ছে না। তবে সম্পর্ক অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, কভিড মোকাবেলায় ভারত কী করছে তা তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো ভারতেও বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তিনি বলেন, ‘কভিড মোকাবেলায় আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুহার কম, সুস্থতার হার উচ্চ।’
শ্রিংলা বলেন, ‘আমরাও কাজ করছি। আমরা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা অনেক বড় পরিসরে ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাচ্ছি। বিশ্বের মোট ভ্যাকসিনের ৬০ শতাংশই উৎপাদন করে ভারত। যখন ভ্যাকসিন তৈরি হবে, তখন নির্দ্বিধায় বলা যায় আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, অংশীদার ও প্রতিবেশী দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে।’
এদিকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, “বেশ কিছু ভ্যাকসিন ভারতে উদ্ভাবনের চেষ্টা হচ্ছে এবং ‘ট্রায়ালও’ শুরু হয়ে গেছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আমাদের দিক থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় ‘ট্রায়ালের’ ক্ষেত্রে, তবে আমরা প্রস্তুত আছি।”
তিনি বলেন, ‘তারাও (ভারতীয় পক্ষও) ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়ে বলেছে, তারা যে ভ্যাকসিনগুলো উদ্ভাবন করছে সেগুলো শুধু ভারতের জন্যই নয়, প্রথম দিকে আমাদের জন্য দিতে হবে। আমাদের দেশে যে ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিগুলো আছে তাদেরও যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়েও সহযোগিতা চেয়েছি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারতের ঋণের আওতায় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ কভিড মহামারির মধ্যে কিছুটা থেমে গিয়েছিল। ভারতীয় পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা আবার এ দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছেন।
পররাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, বাংলাদেশ গত মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ চালুর প্রস্তাব পেয়েছে। ভারত বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এরই মধ্যে এ ব্যবস্থা চালু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। আশা করি, দ্রুত এটি করে ফেলতে পারব।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কভিড মহামারির কারণে বন্ধ থাকা ভারতীয় ভিসা আবারও চালু করতে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই দেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে ভারতের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বা ভারতের সহযোগিতায় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আলোচনা হয়েছে আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক উদ্যাপনের পরিকল্পনা নিয়েও।
সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, “যেমন আমরা জানি, আমাদের ‘সীমান্তে হত্যা’ সমস্যা। সে ব্যাপারেও আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আগামী মাসে আমরা চেষ্টা করব বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক করতে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আমরা সবাই মিলে যাতে এড়িয়ে যেতে পারি সে জন্য সেই বৈঠকের আগে তিনি (ভারতের পররাষ্ট্রসচিব) বিএসএফের নতুন ডিজিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।”
তিনি আরো বলেন, ‘এ বছরের প্রথম ছয় বা সাত মাসে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে। এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ আমরা প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু অঞ্চলে আমাদের কিছু বাংলাদেশি আটকে আছে। যেমন ধুবড়ি অঞ্চলে ২৬ জন জেলে আটকে আছে। এ ব্যাপারেও তিনি (ভারতের পররাষ্ট্রসচিব) বলেছেন, তাদের দ্রুত সহযোগিতা করবেন বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে। এ ছাড়া আলোচনা হয়েছে ভারতে তাবলিগ জামাতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরানোর বিষয়ে।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আগামী বছর ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হচ্ছে। সে সময় নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাদের অঞ্চলকে ভালো জানে এবং দুই দেশের সঙ্গে যেহেতু সম্পর্ক আছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে বর্তমান গভীর সম্পর্ক আছে সেটার আলোকে তারা আমাদের সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’