ডেস্ক নিউজ
অর্থনৈতিক শক্তির জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ভারতকে সুরক্ষা সামগ্রী ও ওষুধ দিয়ে সহায়তা; পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ব্যাপক প্রশংসা করা হচ্ছে। এটাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাইলফলক বলেও মনে করছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। পর্যটনখাতে আয় নেই বললেই চলে। এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট এখন এত যে, কমতে কমতে সেই রিজার্ভ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র সাড়ে চারশ’ কোটি ডলারে। ঠিক এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার মুদ্রা বিনিময়ের (কারেন্সি সোয়াপ) অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঘটনাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নিদর্শন বলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, মুদ্রার অদলবদলে বাংলাদেশকে সম্ভবত আগে কখনও দেখা যায়নি। দেশটির অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান। গত দুই দশকে বেড়ে ২০২০-এ এসে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রসারিত। এমনকি বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ছাড়িয়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে ফেলেছে দেশটি। তাদের মাথাপিছু আয় সম্প্রতি ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
শ্রীলঙ্কাকে অর্থ সাহায্য করার ব্যাপারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির বক্তব্য, এটি সম্ভবত বাংলাদেশের জন্য প্রথমবার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটির জন্য এটি একটি মাইলফলক।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য হিন্দু বলেছে, শ্রীলঙ্কার মূল বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত পর্যটন। মহামারির মারাত্মক আঘাত পড়েছে এতে। এ হিসেবেই মুদ্রা বিনিময় হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। গত এপ্রিলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৪৫০ কোটি ডলারে, যা চলতি বছর তাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে মোট কিস্তির প্রায় সমান।
সংবাদপত্রটি বলছে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে গতবছরের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ১১০ কোটি ডলার মুদ্রা বিনিময়ের অনুরোধ জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটির অনুমোদন দেয়নি ভারত। অথচ বাংলাদেশ মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠা তহবিলের অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। মূলত এখানে দ্য হিন্দু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টিই বলতে চেয়েছে।
শুধু শ্রীলঙ্কাকার সাহায্যই নয়, করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে বাংলাদেশের ওষুধ সহায়তা পাঠানোর কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট। তারা বলছে, মহামারির মধ্যে ভারতকেও অন্তত দুইবার সাহায্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
গত ১৮ মে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সুরক্ষা উপকরণ হস্তান্তর করেছে ঢাকা। এর আগে গত ৬ মে ভারতকে ১০ হাজার ভায়াল রেমডেসিভির দিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রিন্ট বলছে, চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে চলা বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নজর কেড়েছে। গত এপ্রিলে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল চালু করেছে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য মার্কিন বিনিয়োগকারী খোঁজা এবং দ্বিমুখী বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। এমনকি ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ পাকিস্তানের কাছ থেকেও প্রশংসা অর্জন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ডলার চেয়ে চিঠি দেন।
এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সেখানে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।