ডেস্ক নিউজ
আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে ভোজ্যতেলের নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। তবে উৎপাদন ‘স্লো’ করে কৃত্রিম সঙ্কটের মুখে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। এক্ষেত্রে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা মিলগুলোতে সবচেয়ে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। মিলাররা সাপ্লাই অর্ডার (এসও) এবং ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) বিক্রি করে পাইকারদের কাছ অগ্রিম টাকা তুলে নিলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তেল সরবরাহ করেনি। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কট তৈরি হয়। আর এক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভোজ্যতেলের দাম। অন্যদিকে এখনও খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পামওয়েলও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে। তবে অভিযানের মুখে বোতলজাত সয়াবিন তেল গায়ে লিখিত (এমআরপি) মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের উৎপাদনও সরবরাহে অনিয়মের কারণে প্রতিনিধিদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে আবারও তলব করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ বুধবারের তথ্যমতে, বাজারে কোন খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য যা সরবরাহ আছে সেই তেলের দামও অনেক বেশি। তবে পামওয়েলের সরবরাহ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। প্রতিলিটার পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩১-১৪২ টাকায় অথচ নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হলে সমপরিমাণ তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি হতো খুচরা বাজারে। অন্যদিকে টিসিবি বোতলজাত ভোজ্যতেলে সুখবর দিয়েছে। সংস্থাটির মতে, পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৩০-৭৬০ টাকায়। অথচ গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে সয়াবিন তেল এক লিটারের পেট বোতলের নতুন দাম ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৬ টাকা। এর দুইদিন পর ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা কার্যকর করতে ৩ টাকা কমিয়ে প্রতিলিটার পামওয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ১০ দিন অতিবাহিত হলেও বাজারে নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি। নতুন দাম নির্ধারণ করে ওই সময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন দাম অনুসারে ভোজ্যতেল বিক্রি হবে। দেশে তেল নিয়ে কোন কারসাজি করতে দেয়া হবে না।
জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরাই দায়ী। বিশেষ করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে উৎপাদন কার্যক্রম ‘স্লো’ করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। রোজার সময় ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু ওই সময় দাম বাড়ানোর কারসাজিতে মিলগুলো উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মিলগুলোর এ ধরনের অপতৎপরতা কয়েক দশকের পুরনো। এছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীদের এসও এবং ডিও বাণিজ্য রয়েছে। সব মিলিয়ে কারসাজির কারণে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। মিলগুলোতে অভিযানের মুখে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। এ কারণে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সঠিক ব্যাখ্যা চেয়েছে সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করে বলেন, অসাধু ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা যত বড়ই শক্তিশালী হোক তারা সরকারের চেয়ে বড় নয়।