ডেস্ক নিউজ
মতপ্রকাশের নামে সরকারি কর্মকর্তারা তো গুজব ছড়াতে পারেন না!মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার ইউরোপে নবজাগরণের সূচনা ঘটিয়েছিলো। উনিশ শতকে বিজ্ঞানের এ অর্জন সংবাদপত্রের ইতিবৃত্তে আধুনিকতার উদ্বোধন ঘটায়। চীনে হাতে লেখা খবরের কাগজের চল থাকলেও ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি ভারতবর্ষেও সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে এ শতকেই।
সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশে সংবাদপত্র নতুন যুগের সূচনা ঘটায়। মানুষের ভাবনা, চিন্তা, ধর্ম, রাজনীতি, আদর্শের বাহনে পরিণত হয় এ প্রিন্ট মিডিয়া। ‘মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শব্দবন্ধটি নতুন ব্যঞ্জনা লাভ করে।
বিশ্বের সকল দেশেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য। ফলে রাষ্ট্র এটা রক্ষায় ব্যর্থ হলে বলতে হয়, সে নিজের প্রধান কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার আবার বহু রকমফের আছে। যেমন রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা, পারিবারিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা। রাজনৈতিক মত প্রকাশ করতে গিয়ে আমি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন মত প্রকাশ করব কি না?
সাংস্কৃতিক মত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করব কি না? পারিবারিক মত প্রকাশ করতে গিয়ে আমি আমার বাবার বিরুদ্ধে বা মায়ের বিরুদ্ধে বলব কি না। এগুলো আদৌ বলা যায় কিনা? মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে এগুলো বোঝায় কি না? আমি তো মনে করি বোঝায় না।
তার মানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপার সীমানা যেমন আছে, একই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাও কিন্তু আছে। তা না হলে মানুষের পক্ষে সমাজে বসবাস করা সম্ভব হতো না। মানুষ যদি সবাই সম্পূর্ণ স্বাধীন হতো তাহলে সেটা হতো স্বাধীনতার নামে যথেচ্ছাচার।
এই যথেচ্ছাচার থাকলে মানুষের সমাজই গঠিত হতে পারবে না। কোনো না কোনোভাবে মানুষকে তার স্বাধীনতার একটা গণ্ডি টানতেই হয়। মানুষ কোনোদিনও পরিপূর্ণ স্বাধীন ছিল না, বর্তমানেও নেই।
স্বাধীনতা বিষয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। বাসে দুজন যাত্রী পাশাপাশি বসেছে। একজন খুব হাত নাড়ছিল। তখন দ্বিতীয়জন বলল যে, আপনার হাত নাড়ানোর স্বাধীনতা আছে, কিন্তু আমার নাকের ডগার ঠিক বাইরে। আমার নাকের ডগায় হাত নাড়ানোর অধিকার আপনার নেই।
এই গল্প থেকে একটা কথা বোঝা যায় যে, প্রকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা হচ্ছে প্রকৃত স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার ধারণা। অর্থাৎ এই সীমার বাইরে যাওয়া যাবে না। আমার স্বাধীনতার নামে অন্যের নাকে আঘাত করতে পারব না।
মানুষের মৌলিক দাবির মধ্যে ব্যক্তি-স্বাধীনতা একটি। রাইট টু লাইফ, রাইট টু প্রোপাট্রিজ, রাইট টু ফ্রিডম ওপেনিয়ন’ এ তিনটিই কিন্তু আধুনিককালের। এখন ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই, একথা বলাটা প্রায় অচল হয়ে গেছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমার ব্যক্তিগত মত রাষ্ট্রের মৌলিক অস্তিত্বের বিরুদ্ধে দিতে পারি না। আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
বাংলাদেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কাজ করার স্বাধীনতা আছে। আমার জীবনটাকে কীভাবে কাটাব না-কাটাব তার অধিকার আমার আছে। আবার প্রতিটি জায়গায় তার সীমানাও টানা আছে। আমি যা খুশি তাই করতে পারি না।
পরিবারের ওপর আমার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু আমার সন্তানকে আমি হত্যা করতে পারি না। ঠিক তেমনি করে আমার প্রতিবেশীর ব্যাপারেও আমার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু তার কোনো জমি আমি দখল করতে পারি না, তার বাড়িতে আমি জোরপূর্বক ঢুকতে পারি না। আমার ব্যক্তিগত বাড়িতে বিনা অনুমতিতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া না দেওয়ার অধিকার আমি রাখি।
আমার জন্য বিপদ নিয়ে কেউ যদি আমার বাড়িতে ঢোকে, তাহলে তাকে আমার বাড়ির সীমানার মধ্যেই হত্যা করতে পারি, যদি আমি বিচারকের সামনে প্রমাণ করতে পারি যে, আমি তাকে হত্যা না করলে সে আমাকে অবশ্যই হত্যা করত। আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে হত্যা করেছি।
ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টাকে তাত্ত্বিকভাবে আলোচনা করা যায়। গড়পড়তাই আমরা বলি ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু একটা সীমানা টানা থাকবে।
স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা করা যাবে না। এই স্বেচ্ছাচারিতার স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তির তো নেই-ই, সরকারেরও নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাষ্ট্রের তরফ থেকে সেটা প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করতে না পারছে। যেমন কেউ খুন করলে বিচার বিভাগ তাকে মৃত্যুদন্ড দেবে। এটা বিচারকের স্বাধীনতা।
এই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নেই। আমাদের কারোরই নেই। এই থেকে বোঝা যায় যে, আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে, কিন্তু অপরের স্বাধীনতা আমি কোনোক্রমেই ক্ষুণ্ণ করতে পারি না। আমার স্বাধীনতা আমি অন্যের জন্য ক্ষতিকারক করে তুলতে পারি না। সোজা কথায় স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারি না।
আমাদের দেশের প্রায় সবাই বলে থাকেন ( ১ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে- গণতন্ত্র। (২) আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের অনুশীলন না থাকার কারণে সামাজিক বা রাজনৈতিক সমস্যাসমূহের সমাধান করা যাচ্ছে না। (৩) আমাদের সমাজের মূল সমস্যা গণতন্ত্রহীনতা। এ কথাগুলোর কোনোটাই সর্বাংশে সত্য নয়। উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
প্রথমেই দেখতে হবে- গণতন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি ? বাক-স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র হচ্ছে- ‘একটা নির্দিষ্ট সময়ের’ এবং ‘নির্দিষ্ট মানব সমাজের’ প্রতিষ্ঠিত বা প্রচলিত সামাজিক আইনকানুন বা নিয়ম মান্য করার বাধ্যবাধকতা, অন্যের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা, উপলব্ধি এবং দায়িত্ববোধও।
অন্যভাবে বললে গণতন্ত্র হচ্ছে- পরিমাপক বা দাঁড়িপাল্লা। সমাজ-পরিমাপক বললে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। আমাদের দেশের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ‘গণতন্ত্র বলতে’ বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বুঝায়। এখানেই আমার প্রশ্ন- সবার বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে।
স্বাধীনতা দিলাম কিন্তু ‘কি বিষয়ে বলবেন’ এবং ‘কতটুকু বলবেন’? অর্থাৎ প্রথমে আপনাকে বলার ‘বিষয়বস্তু’ ঠিক করতে হবে, আপনি ইচ্ছা করলেই যে কোনো বিষয়ে বলতে পারবেন না। বিষয়বস্তু ঠিক হওয়ার পর ওই বিষয়ে আপনি কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন? ইচ্ছা করলেই আপনি ‘যা খুশি তা’ বলতে পারেন না।
আমরা জানি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক সমতাভিত্তিক ও মৌলিক মানবাধিকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য।
আপনি যদি বলতে থাকেন বা বলতে চান- বাংলাদেশ হচ্ছে মুসলিম জাতীয়তাবাদী-ইসলামিক প্রজাতন্ত্র, তাহলে কি আপনার বলার অধিকার তথা বাক-স্বাধীনতা থাকবে? নাকি থাকা উচিত হবে? তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো? আপনি ‘চলার বা বলার’ অধিকার ভোগ করবেন- এটা এক ধরনের বায়বীয় বিষয়।
মূল বিষয় হচ্ছে- আপনি কোন বিষয়ে বলবেন বা বলতে পারবেন এবং কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন- এটা আগে ঠিক করে নিতে হবে। তারপর অধিকারের বা প্রয়োগের বিষয়টি আসবে।
ধরুন , আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন- এটা আপনার গণতান্ত্রিক এবং নাগরিক অধিকার। কিন্তু আপনি যে সমাজের বা দেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, সে সমাজের বা দেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটার কিছু নিয়মকানুন থাকে- অবশ্যই আপনাকে তা মেনে হাঁটতে বা চলতে হবে।
কোনোভাবেই আপনি নিয়ম না মেনে হাঁটতে বা চলতে পারবেন না। যদি তা করেন বা করার চেষ্টা করেন- তাহলে হয় দুর্ঘটনা ঘটবে- নতুবা অন্যের অসুবিধা হবে।
এখানে স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র হচ্ছে আপনি যে দেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন সে দেশের রাস্তা দিয়ে হাঁটার নিয়মকানুন মেনে চলার দায়িত্ববোধ। ঠিক একইভাবে আপনি কথা বলবেন বা সমালোচনা করবেন বা আদেশ-উপদেশ দেবেন- কিসের ভিত্তিতে।
যদি প্রশ্ন হয়- কি কি কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল- অর্থাৎ জন্মের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো কী কী? সংক্ষেপে এবং সংবিধান অনুযায়ী এখানে উত্তর হবে- বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক সমতাভিত্তিক ও মৌলিক মানবাধিকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য।
তাহলে আমরা কি উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে ‘চলা-বলার’ কাজটি করেছিলাম বা বর্তমানেও করছি? এখানে আমার উত্তর হবে- ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমরা এর ‘উল্টোটাই’ করে এসেছি এবং বর্তমানেও করে যাচ্ছি।
পুরো পৃথিবীই আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মরণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এক পরিপত্র জারি করে এই নির্দেশনা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি এ ধরনের পোস্টে কমেন্ট, লাইক ও শেয়ার করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই পরিপত্র জারি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। কেননা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বা অশালীন কিছু লেখার জন্য যদি চাকরিটিই চলে যায়, তাহলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবনযাপন করাই কঠিন হয়ে পরবে। চাকরির বাজারে সোনার হরিণ হিসাবে পাওয়া সরকারি চাকরিটি হারালে আপনার কি অবস্থা হবে, আপনার পরিবারের কি অবস্থা হবে সেটা একবার ভেবে দেখেছেন কি? সরকারের চাকরি করে সরকারের সমালোচনা গঠনমূলকভাবে করতেই পারেন, তবে সেটা যেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত না করে সেই কারণেই ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এ কর্মচারীদের আরো একগুচ্ছ বিধি নিষেধ উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে বলে মনে করি।
এই পরিপত্র জারির পর থেকেই দেখছি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু অংশ এর বিরোধিতা করছেন। আসলে তারা বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না। কেননা, সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে সরকার সুরক্ষা দিচ্ছেন। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে, রাষ্ট্রের বিরোধী কিছু লিখলে এমনিতেই আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। সে অবস্থায় আপনাদের আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরং উপকারই করে দিয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়- ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন সার্ভিস বা পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করে’ এমন কোন পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এতে ‘অন্য কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য’ সম্বলিত কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট লাইক বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সরকারি কর্মচারীদের বলা হয়েছে। এ পরিপত্রে সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থার কর্মচারীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ একাউন্টের ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজে দায়ী হবেন’ – এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিপত্রটিতে মোট আটটি নির্দেশনা রয়েছে – যাতে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী, জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী, ধমীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী, লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী, জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টিকারী, বা ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল – এমন তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজন কার্টুনিস্ট এবং একজন লেখককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে অবস্থানকরা কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে।
আমরা এর আগেও ২০১৯ সালে ৬ জুলাই মাসে দেখেছি, সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের জন্য একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিকে তেমনভাবে আমলে নেননি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তখন বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন দেশে কর্মরত কূটনীতিকদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মানছেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তাদের অনেকেই সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিচ্ছিলেন। অন্যের স্ট্যাটাসে কমেন্ট বা মন্তব্য করেছেন। যা সরকার এবং সরকারের কর্মকাণ্ডকে বিব্রত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস ছিল। মূলত এই পক্ষটিই এখনো পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রটির বিরোধিতা করছেন।
দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা এই পরিপত্রের বিরোধিতা করছেন তারা আদতে সরকার বিরোধী এবং সরকারের মধ্যে থাকা জামায়াত-বিএনপির আদর্শপুষ্ট। কেননা তারা চান রাষ্ট্রীয় এই দুর্যোগের সময়ও দেশের ক্ষতি করতে। তা না হলে তারা নিশ্চিতভাবে সরকারি চাকরি করেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা , জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মানহানি করা, জনমনে অসন্তোষ ছড়ানো যাবে, ভিত্তিহীন অসত্য তথ্য প্রচার করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই চরিতার্থ করতে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি এমন কাজে লিপ্ত হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তো অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন হয়ে পরবে। কেননা, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাই সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই পরিপত্রের নির্দেশনা মেনে চলে দেশকে এই দুযোর্গ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা করোনা মোকাবিলায় সফল হতে পারবো, ইনশাল্লাহ।