সারাদেশে মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসব আমেজে মাতোয়ারা দেশ। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, ষোলো উপাচার আর ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহা নবমী। চন্ডী পাঠ, ঢাকের বোল, মন্ত্র, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি, অঞ্জলি, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপন্ড দীপ সব মিলিয়ে প্রতিটি মন্ডপেই অন্যরকম পরিবেশ। বিশ্ব শান্তি ও সবার মঙ্গল কামনায় উৎসবের দ্বিতীয় দিনে দশভুজা দেবীর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন সবাই। সকাল থেকেই রাজধানীর মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের ঢল নামে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে প্রতিমা দর্শন।
উৎসবের সঙ্গে মিল রেখে সবাই সাধ্যমতো পোশাক পড়ে আসেন প্রতিমার পায়ে অঞ্জলি দিতে। পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনায় দেয়া হয় ভোগ আর নৈবর্ত্য। কাসার বাসনে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বাসহ ফলমূল দিয়ে সাজানো হয় মায়ের ভোগ। আজ সোমবার মহানবমী। ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। আছে সন্ধিপূজাও।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে পূজার মণ্ডপের সংখ্যা। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে সারাদেশে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিলো ১১ হাজারের কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজারেরও বেশি। যা দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সু-সংবাদ। শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করবো।’
সরকারি সহায়তায় গতবছরের ন্যায় এবারও পূজা পালিত হচ্ছে কক্সবাজারের হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানের ১১৩টি হিন্দু পরিবার দূর্গাপূজার আয়োজন করেছে। পূজার সকল কিছুই বহন করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুরাম পাল জানান, জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা দেয়ায় পুরো রোহিঙ্গা কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণী। আমরা হিন্দু রোহিঙ্গারা দ্বিগুণ ঋণী হয়ে থাকলাম। নতুন কাপড়, পূজা-অর্চনার পণ্য সামগ্রী ও বিশাল প্রতিমা বসিয়ে সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজা পালন করানো হচ্ছে। আশ্রয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক এ বদান্যতা জীবন দিয়েও শোধ করার নয়।
এইবার শারদীয় দুর্গাপূজায় এখন পর্যন্ত কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। পূজা নিয়ে কেউ ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে প্রচারণা চালালে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার সারাদেশে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ৩১ হাজার ১০০টি। মণ্ডপের আশপাশে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও প্রতিটি পূজা মণ্ডপে স্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি আইনশৃঙ্খলা কমিটি থাকবে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করবে।