ইসলামের দৃষ্টিতে গুজব অত্যন্ত নিন্দনীয় জানিয়ে শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরীদউদদীন মাসঊদ বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার ইসলামসম্মত নয়।
ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।
মাওলানা মাসঊদ বলেন, “আজকে সরকার যখন দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তখন দেশের অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার জন্য এক অশুভ শক্তি নানা জায়গায় গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। গুজব ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। ইসলামের নামে গুজব ছড়িয়ে মুসলমান কোনো সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচার করতে পারে না।”
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘুরা আমাদের আমানত। কিন্তু আমরা দেখছি, ইসলামের নামে গুজব ছড়িয়ে মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে নগ্নভাবে হামলা করা হয়েছে। লালমনিরহাটে গুজব ছড়িয়ে একজন মুসল্লিকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
“পৃথিবীর যেখানেই আজকে সংখ্যালঘু বা দুর্বলদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, আমরা সব অত্যাচার ও নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাই। আমরা মানুষকে সতর্ক করি, আপনারা এই গুজব থেকে নিজেরা বাঁচুন এবং অন্যকেও বাঁচান।”
মানববন্ধনে সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, “কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘুর বাড়িঘরে হামলা ও লালমনিরহাটের হত্যাকাণ্ডের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। কোনো ধর্মই সহিংসতা ও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করা প্রত্যেকটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। এদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। সবাই সতর্ক থাকুন। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ঠাঁই হবে না। আমরা এদেরকে অবশ্যই প্রতিহত করব।”
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা এমদাদ হোসেন মতিন বলেন, “একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসররাই সম্প্রতি দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমাদের সন্তান ও প্রজন্মরাই এই অপশক্তিকে প্রতিহত করবে।”
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ছয় দফা দাবি জানায় কর্মসূচির আয়োজক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাদের দাবিগুলো হল-
# কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
# লালমনিরহাটে সহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে পুড়িয়ে ফেলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
# বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
# ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
# মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে।
এবং
# মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।