নিউজ ডেস্ক:
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু এই মানবিকতার কারণেই এখন নানা ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি৷ খুব সহসাই এ সংকটের সমাধান হবে না জেনেও তাদের আশ্রয় দিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ। সঙ্গে মিয়ানমারের দীর্ঘ কৌশলের অংশ হিসেবে মাতৃভূমি ছেড়ে আসা রোহিঙ্গারাও চায় নিজ মাটিতে ফিরে যেতে।
সংকটের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় জনগণ। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন স্থানীয়দের অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রোহিঙ্গারা। তাই ক্যাম্পে সীমানা দেয়াল নির্মাণ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি স্থানীয়দের।
এদিকে দুই বছরের মাথায় এসেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বরং মিয়ানমারে প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত কিভাবে স্থানীয় জনগণের সাথে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা যায় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এরকম নানা কারণে এবারের বিশ্ব শরণার্থী দিবস (২০ জুন) বাংলাদেশের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দিবসটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে মূল আলোচনায়।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প কুতুপালং মেগা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। কেবল এই একটি ক্যাম্প নয়; কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় দুই বছর ধরে এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর বোঝা টানছে বাংলাদেশ। এরও আগে ১৯৭৮ সাল থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন শুরু হয় বাংলাদেশে। মূলত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের দেশ ছাড়া করার মিয়ানমারের ষড়যন্ত্রের কুফল ভোগ করছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের জনবহুল দেশের তালিকায় এক নাম্বারে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বিশ্বের গড় মানুষ বসবাসের হার যেখানে মাত্র ১৫ জন। সেখানে বাংলাদেশে ১,১০০ জনেরও বেশি। অথচ যেখান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে সেই মিয়ানমারেও প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষ বসবাস করে মাত্র ৭৬ জন। আর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের যে স্থানে আশ্রয় নিয়েছে সেখানকার স্থানীয় জনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোহিঙ্গা। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থান হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যায় এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে।
যেখানে উন্নত অনেক রাষ্ট্রও শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন, সেখানে এতো সীমাবদ্ধতার পরও বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে মানবিক রাষ্ট্রের কাতারে। অথচ জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের আন্তর্জাতিক প্রটোকলেও স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। এরপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে মর্যাদাবান হিসেবে দেখা হচ্ছে। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচাতেই বাংলাদেশ মানবিক হয়েছে বলে মনে করেন মানবতাকর্মীরা।
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে সেখানে যারাই বিনিয়োগ করুক না কেনো তা কখনো নিরাপদ হতে পারে না বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের। রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না গেলে কেবল মিয়ানমার আর বাংলাদেশের সমস্যা নয়; পুরো পৃথিবীর জন্য এটি বড় সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবেন, ঘরে ফিরবেন বিশ্বের সকল উদ্বাস্তু আর নতুন করে উদ্বাস্তু হবে না কোনো মানুষ; এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।