ডেস্ক নিউজ
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘোরার দিন শেষ। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদনকারী যাতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পান, এজন্য কড়া নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একসময়ে এই এনালগ সেবা এখন পুরোপুরি ডিজিটাল করা হয়েছে। শতভাগ অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে আবেদন করার প্রক্রিয়া। আরও কম সময়ের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সরবরাহ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা হচ্ছে। চালু হয়েছে আবেদনকারীর মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে সনদপত্র সংগ্রহ করার তারিখ জানিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, এই সনদপত্র পেতে িি.িঢ়পপ.ঢ়ড়ষপব.মড়া.নফ লিংকে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে পাসপোর্টে থাকা তথ্য অনুযায়ী। আবেদনে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ছাড়াও জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা থাকলে বেশি সুবিধা পাবেন প্রার্থী। তবে জরুরি যোগাযোগের নির্ধারিত ঘর পূরণ না করলেও কোনো অসুবিধা নেই। আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি ও ব্যাংক চালানের কপি স্ক্যান করে সংযুক্ত করতে হবে।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দেশের যেকোনো শাখা থেকে ৫০০ টাকার চালান করতে হবে। চালানের টাকা পাঠাতে হবে ১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১ কোড নম্বরে। বিকাশ বা অন্য মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করেও চালানের টাকা পরিশোধ করার সুযোগ আছে। এতে করে সেবাপ্রার্থীকে আর ব্যাংকে যেতে হচ্ছে না।
আবেদনপত্রের একটি প্রিন্ট কপি সংগ্রহে রাখতে হবে। প্রিন্ট কপির ওপরে একটি রেফারেন্স নম্বর থাকবে। তার মাধ্যমে আবেদনপত্রটি যথাযথ নিয়মে
হয়েছে কি না তাও জানা যাবে অনলাইনে।
আবেদনপত্রটি প্রথমে জমা হবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে। সেখান থেকে ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় যাবে। তথ্যাদি তদন্ত শেষে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাতে স্বাক্ষরসহ সিলমোহর দিবেন। এরপর সেটি চলে যাবে সংশ্লিষ্ট জোনের উপকমিশনার (ডিসি) বরাবর। ডিসি অফিসে তা এন্ট্রি হবে। তা পুনরায় পাঠানো হবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে। এখান থেকে তা চলে যাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এন্ট্রি হওয়ার পর তা আবার চলে আসবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে। এরপর সনদপ্রার্থী তার পাসপোর্ট দেখিয়ে বা তার মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে পাসপোর্ট পাঠিয়ে অফিস সময়ের মধ্যেই সংগ্রহ করতে পারবেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। পুরো প্রক্রিয়াটি পুলিশ সম্পন্ন করবে। এজন্য সেবাপ্রার্থীকে পুলিশের দ্বারে দ্বারে যোগাযোগ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত জরুরি একটি সেবা। বিশেষ করে বিদেশ যাওয়ার সময় এই সনদপত্র থাকতে হয়। এজন্য আমরা এই সেবার মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডিএমপির দায়িত্বশীল সব পুলিশ সদস্যদের অত্যন্ত দ্রম্নততার সঙ্গে এই সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।’
এমন উদ্যোগের সুফল পাওয়াদের মধ্যে হোসনে আরা নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধা যায়যায়দিনকে বলেন, ‘গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে যাবতীয় নিয়ম মেনে আবেদন করেছিলাম। আমি ৩ জানুয়ারি বিকালেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। এতে আমি সত্যিই খুবই আনন্দিত এবং অভিভূত। পুলিশের এমন সেবা আগে ভাবতেই পারিনি। আমার ধারণা ছিল অন্তত ১৫ দিন লাগবে। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে পুলিশ আমার প্রতি অনেক সহমর্মিতাও দেখিয়েছে। আমাকে একবারও ডাকেনি। যেটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমার পক্ষে আমার মনোনীত ব্যক্তি সনদপত্রটি সংগ্রহ করেছেন। ব্যক্তি জীবনে আমি আমেরিকাসহ অনেক উন্নত দেশে যাতায়াত করি। নতুন করে আমার দেশের পুলিশ সম্পর্কে ধারণা পাল্টালো।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ডক্টর এ এফ এম মাসুম রাব্বানী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি পুলিশি সেবা মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারকে আরও আধুনিক করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি বসানোর কাজ চলছে।’