ডেস্ক নিউজ
এক সময় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট এবং প্লট পাওয়ার কল্পনা করতো না। এখন আর সে অবস্থা নেই। দিন পাল্টেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উদ্যোগে এখন সল্পমূল্য ও সহজেই রাজধানীতে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এসব মানুষকে আবাসনের জন্য পূর্বাচল, উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। নগরবাসীকে বিনোদন দেয়ার জন্য হাতির ঝিলের মতো গুলশান-বনানী ও বারিধারা লেকের ওপর দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। রাজউকের কাজে গতি আনতে হলে অনুমোদিত নতুন জনবল কাঠামোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে দীর্ঘমেয়াদী ৬৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছে। গত তিন বছরে ৭টি প্রকল্পে বেশ সুনাম অর্জন করেছে রাজউক। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ঢাকা শহরের পূর্ব পশ্চিম দিকে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুযোগের জন্য প্রগতি স্মরণী থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্ত ও ৪টি ব্রীজসহ ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, সুপরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নত নগর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ড্যাপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের (ফেইজ-১) বাস্তবায়ন, পূর্বাচল, উত্তরা ৩য় পর্ব ও ঝিলমিল প্রকল্পে ৩০ হাজার আবাসিক প্লট হস্তান্তর এবং উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ৪৪ হাজার ফ্ল্যাট গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এছাড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি ও রাজউকের নিজস্ব খালি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে রাজধানীর গুলশানে একটি বেইজমেন্টসহ ১০ তলা বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। রাজউকের আওতায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ১৯৯৫-২০১৫ প্রণয়নের কাজ করা হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রিতে বেসরকারি কোম্পানিগুলো রাজউকের উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর চেয়ারম্যান ড. সাঈদ হাসান শিকদার ইনকিলাবকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে রাজউক সম্পর্কে মানুষের একটি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ধারণা পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ৬৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জল মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, আপনি জানেন, এক সময় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট এবং প্লট পাওয়ার কল্পনাও করতো না। এখন আর সে অবস্থা নেই। দিন পাল্টেছে। এখন স্বল্পমূল্য ও সহজেই রাজধানীতে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। নগরবাসীকে বিনোদন দেয়ার জন্য গুলশান-বনানী ও বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। রাজউকের কাজে গতি বাড়তে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে ২১৪ একর জমির ওপর ৬ হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নেয় রাজউক। ২০১৬ সালের মধ্যে গ্রাহককে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হয়। ১৭৯টি ভবনের মধ্যে ৭৯টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভবনের ১০, ১২ ও ১৪ তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ হয়েছে।
পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ : ১৯৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে বেশকিছু প্লট গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এ প্রকল্পে ২ দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। রাস্তা, পয়ঃনিষ্কাশন, ব্রিজ, কালভার্ট, আন্ডারপাস, ফুটপাথ, ফুটওভার, ওভারপাস, সুইস গেট, লেক খনন, বনায়ন-সবকিছুর উন্নয়নে কাজ চলছে।
ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের কাজ : ৩৮১ একর জমির ওপর ১৯৯৫ সালে ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের কাজ শুরু করে রাজউক। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে মেয়াদ ছিল ২০০১ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। তাই সময় বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন মাসে শেষ হয়।
বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান ঝিলমিল প্রকল্পে খাবার পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। এছাড়া তারা প্রকল্প এলাকায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পে সব প্লট প্রস্তুত। প্লট হস্তান্তরের কাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮০০ প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যারাই আসছেন তাদেরই প্লট দেয়া হচ্ছে।
উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পে : ১৯৯৯ সালে শুরু করা ওই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কাজ হয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০০৯ সালে। পরে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরকে নতুন সময়সীমা ধরে কাজ চালিয়ে গেলেও প্রকল্পে এখনো বিদ্যুৎসংযোগই দেয়া হয়নি।
রাজউকের কাজে গতি আনতে গত বছর অনুমোদিত রাজউকের নতুন জনবল কাঠামোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৯৮০ করা হয়। সৃষ্ট পদগুলো পূরণে কয়েক বছর থেকে এক কোটি টাকা খরচ করে সেনাবাহিনীর এমআইএসটি শাখাকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। এমআইএসটি সবকিছু সম্পন্ন করে দিলেও এই দীর্ঘ সময়েও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি রাজউক। বিভিন্ন মামলার বেড়াজালে বন্ধি হয়ে আছে।
রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজ কোনো সময়ই রাজউক যথাসময়ে শেষ করতে পারে না। বিত্তশালীদের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলো দ্রুতগতিতে শেষ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে এক কর্মকর্তা বলেন, যেমন বনানী-গুলশানের ন্যাম ভিলেজ ও ন্যাম ভিলা প্রকল্প। ১৯৯৯ সালে নেয়া দুটি প্রকল্প ঠিকই ২০০৬ সালে শেষ করে ফেলেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শুধুই বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, রাজউকে যে সবর ঘটনা ঘটছে তার মন্ত্রণালয় থেকে করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কারণে রাজউক এগিয়ে যেতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, এছাড়া বেসরকারি কোম্পানি গুলো রাজউককে দাড়তে দিচ্ছে না। কারণ তারা বেশি দামে প্লট ও ফ্লাট বিক্রি করতে পারছে না।